হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
শুরুতেই মহান আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করি, স্মরণ করি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, কামনা করি শহীদদের আত্মার মাগফিরাত। বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এই দেশ এখন স্বাধীন। আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীন জন্মভূমির উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। এই স্বাধীনতার জন্য স্থাপন করতে হয়েছে আত্মদানের বিরল দৃষ্ঠান্ত, পেশ করতে হয়েছে ত্যাগের সর্বোচ্চ নজরানা। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি প্রথমে আমাদের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল, মায়ের ভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করেছিল। সেই অশুভ তৎপরতাকে বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিহত করেছিলেন ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি। ফলশ্রুতিতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। আমরা লাভ করি মাতৃভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা। রক্তে রঞ্জিত এই ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে বাংলার সূর্য সন্তানেরা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির চরম বৈষম্য ও লাঞ্ছনা-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৭১ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামে। স্বাধিকার চেতনা ও দেশাত্মবোধ উজ্জ্বীবিত হয়ে অদম্য সাহস ও প্রেরণা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তির মিছিলে শরীক হন বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। এ সংগ্রামে অনেকে হারিয়েছেন মা-বাবা, অনেকে হারিয়েছেন স্বামী, অনেকে হারিয়েছেন ভাই-বোন, আর বহু মা-বাবা হারিয়েছেন তাঁদের প্রাণপ্রিয় সন্তান। এভাবে লাখো শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর এসেছে স্বাধীনতা, এসেছে বিজয়, পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। বিশ্ব মানচিত্রে আসন গড়ে নেয় বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্র। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বিজয়ের চার দশক পেরিয়ে পঞ্চম দশকে চলমান। এ পর্যায়ে আমাদের মূল্যায়ন করা দরকার স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল শান্তিময় বাংলাদেশের যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা লড়াই করেছিলেন, বিলিয়ে দিয়েছিলেন বুকের তাজা রক্ত, তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা কতটুকু সফল হয়েছি। বিজয়ের চার দশকেরও অধিক এই সময়ে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হয়েছে কন্টকাকীর্ণ সুদীর্ঘ পথ। আজও বহুমুখী আগ্রাসনে জর্জরিত রক্তার্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। এমন ক্রান্তিকালে রক্তে পাওয়া স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অর্থবহ করতে প্রয়োজন খুন, গুম, অপরহণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকের মৌলিক ও মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। জনগণের ব্যক্তি, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। দূর্নীতির মূলোৎপাটন করা। আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। দারিদ্র বিমোচনে বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করা। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য বন্ধ করা। যুব সমাজকে অপসংস্কৃতি ও অনৈতিকতার ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষায় সুস্থ ধারার সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করা। যার যার ধর্ম-কর্ম পালনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে আশু পদক্ষেপ নেয়া। সর্বোপরি সংঘাত ও অসহিষ্ণু রাজনীতিকে বিদায় দিয়ে ঐক্য ও সংহতির দূর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তোলা। এরই মধ্যদিয়ে আমাদের দেশ একটি আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন শান্তিময় সুখী-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বিজয়ের এই গৌরবদ্বীপ্ত দিনে এমনই প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক:
সভাপতি, রামু লেখক ফোরাম।