চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে চলন্ত ট্রেনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা লোহাগাড়া বার আউলিয়া ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেধাবী ছাত্র তৌকিরুল ইসলাম হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছে তার পরিবার।

হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পর আজ সোমবার দুপুরে (৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত তৌকিরের মা আয়শা বেগম ভৈরব রেলওয়ে থানা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সুরুজ্জামান সরকার এর মনগড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদানের প্রতিবাদ এবং পূন:তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের বিচার দাবী জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৩১ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক সভায় অংশ গ্রহন শেষে ঢাকা থেকে ট্রেন যোগে চট্টগ্রাম ফেরার পথে টঙ্গী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় আমার আদরের সন্তান লোহাগাড়া বার আউলিয়া ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মেধাবী ছাত্র তৌকিরুল ইসলাম তৌকিরকে।

পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিন গং ইচ্ছাকৃতভাবে তৌকিরকে হত্যার জন্য ট্রেনে ঝগড়া করে এবং ছুরিকাঘাত করে তেšকিরকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তৎকালিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে বিভিন্ন সংবাদ ছাপানো হয়। সেই সাথে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে রাস্তা অবরোধ, মানবন্ধন কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন।

হত্যার সাথে জড়িত আসামীদের নাম, ঠিকানাসহ গাজীপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, আদালত নং-০১, (মামলা নং-৪৬৬ দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায়) ২২ জনকে মূল আসামী করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করি।
আদালত শুনানী শেষে মামলাটি ভৈরব রেলওয়ে থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। যাহার মামলা নং-৫(৫)১৮ইং।উক্ত মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীদের সাথে যোগসাজশে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে আসামীদের পক্ষ নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এ হত্যাকে ট্রেনের সাথে ট্রাকের ধাক্কা লাগার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রেনের ইঞ্জিন আগে যেতে পারলে কেন তৌকির বগীর মধ্য থেকে পড়ে যাবে?

এ ঘটনা দেশের পত্র-পত্রিকায় তৌকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশিত হয়। ট্রাকের সাথে সংঘর্ষের কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয় নাই। ট্রাকের কোন গাড়ীর নম্বর উল্লেখ করে নাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে তৌকিরের মা তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার স্বাক্ষীদের নিয়ে যে সব তথ্য চুড়ান্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন সে বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য খরচের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোটে আসামীদের দলীয় পরিচয় দিয়েছে। আমরা তো সব অপরাধীর বিচার চেয়েছি।জেনেছি আইনের চোখে সবাই সমান ,অপরাধীর কোন দলীয় পরিচয় থাকে না, আসামীরা দলীয় নাম নিয়ে রমরমা ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। তৌকির হত্যা ছাড়া আসামীদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা নিয়ে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তৌকিরের মা আয়শা বেগম আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে সুনামের সাথে অপরাধীদের বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারক অসাধু উপায় অবলম্বনের কারণে দেশের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৌকির হত্যা মামলা হওয়ার পরেও তদন্ত কর্মকর্তা কোন আসামী গ্রেফতার করেনি। তাই আদালত যদি প্রশাসনের অন্য কোন সংস্থার মাধ্যমে পূনরায় তদন্ত করার আদেশ দিলে মামলাটির সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে।

আমি ভৈরব রেলওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার মিথ্যা, ভূয়া তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত তৌকিরের মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তৌকিরের ভাবী মোছাম্মৎ খাইরুন্নেছা। উপস্থিত ছিলেন-নিহত তৌকিরের বৃদ্ধা মা আয়শা বেগম ও তৌকিরের বড় ভাই মোহাম্মদ আলমগীর।