তোফায়েল আহমদ,কালেরকন্ঠ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি এড়ায়নি এক কিশোরের প্রদত্ত মোবাইল খুদে বার্তাও (ম্যাসেজ)। দেশের এক প্রান্ত সুদুর টেকনাফের এক অজপাড়ার কিশোরের খুদে বার্তাটিও যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো ফেলনা বিষয় নয়। এমন একটি মোবাইল বার্তা নিয়েও সাড়া দিয়েছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। এমনই তথ্য মিলেছে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের একজন হতদরিদ্র রিকশাচালকের আকস্মিক জমি ও একটি বাড়ি প্রাপ্তির ঘটনা নিয়ে।

ব্যাপারটি অনেকেরই কাছে যেন অবিশ্বাস্য। এরকম ঘটনা নিয়ে অনেকেই হয়ে পড়েছেন রীতিমতো হতবাকও। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক রমজান আলী (৪৫) এখন বিশ শতক জমির মালিক (সাড়ে ১২ কাঠা)। সেই জমিতে রাতারাতি নির্মিত হয়েছে টিন শেড একটি পাকা বাড়িও। এলাকার আশেপাশে এরকম কারো প্রাপ্তির কোনো খবর নেই। তাই আকস্মিক নিঃস্ব রিকশাচালক রমজান আলীর জমি ও বাড়ি প্রাপ্তির ঘটনাটি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

বিষয়টি কালের কণ্ঠ’র কাছে খোলাসা করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। জেলা প্রশাসক জানান, মাস দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে তাকে ঘটনাটি জানানো হয়। টেকনাফ সীমান্তের মামুন (১৭) নামের এক কিশোর প্রধানমন্ত্রীর মোবাইলে একটি খুদে বার্তা প্রেরণ করে। মামুন প্রধানমন্ত্রীকে জানায়- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এক অসহায় পরিবারের সন্তান। আমাদের জমিও নেই ঘরও নেই। আপনার সহযোগিতা চাই।’

জেলা প্রশাসক বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের মোবাইলে এরকম খুদে বার্তাটি পেয়েই নির্দেশনা প্রদান করেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।’ এরপর জেলা প্রশাসক টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ব্যাপারটি অবহিত করেন। টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন গিয়ে মামুন নামের সেই কিশোরকে খুঁজে বের করে তাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে যান। মামুনের কাছে বিস্তারিত জেনে জেলা প্রশাসক ও টেকনাফের ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন।

এ বিষয়ে কিশোর মোহাম্মদ মামুন কালের কণ্ঠকে জানায়, তারা ৪ ভাই ও এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। তার বাবা-মাসহ বর্তমানে ৬ জনের সংসার। নিজেদের কোনো জমি এবং ঘর নেই। বন বিভাগের জমিতে একটি জীর্ণশীর্ণ কুঠিরে বসবাস তাদের। পুরো সংসার হতভাগা রিকশাচালক বাবা রমজান আলীর কাঁধের ওপর। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণী থেকেই পাঠ চুকিয়ে নিতে বাধ্য হয় সে।

কিশোর মামুন এরপর একটি দোকানে মাসিক তিন হাজার টাকায় চাকরি নেয়। কিন্তু কভিড লকডাইনের কারণে সেই চাকরিও এখন নেই। ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে দুজন নুরানী মাদরাসায় পড়ে। মামুন লেখাপড়া করতে না পরলেও মোবাইল-ফেসবুকের কারণে তার অনেক কিছুই জানা। ডিজিটালের বদৌলতে কিশোর মামুন ইতিমধ্যে আয়ত্তে এনেছে জানা-অজানা বহু বিষয়াদি।

মামুন কালের কণ্ঠকে আরো জানায়- ‘পরিবারের লাগাতার অভাব-অনটনে এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়ি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব। কপালে যাই আছে তাই হবে।’ মোবাইল অনলাইনে জাতীয় সংসদের তিন শ সাংসদের তালিকা বের করে সে। সেই তালিকা থেকে সে সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নম্বর। সাহস করে মোবাইলে দুয়েকবার সরাসরি রিং দেয়। কিন্তু মোবাইল রিসিভড না হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত নেয়-এবার সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুদে বার্তা (ম্যাসেজ) প্রেরণ করবে।

কিশোর মামুন এক রাতে প্রধানমন্ত্রীর মোবাইলে খুদে বার্তাটি প্রেরণ করে। সেই বার্তার জবাব আদৌ পাবারও আশা করেনি সে। কিন্তু ভাগ্য বলে কথা। পরের দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী-১ পরিচয়ে মামুন সাড়া পায়। ওপ্রান্ত থেকে তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া হয়। দুপুরেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুরূপ আবার সাড়া মিলে। এরপর একে একে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও টেকনাফের ইউএনও পরিবারটি নিয়ে বিস্তারিত যাচাই বাছাই করে নেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে রিকশাচালক রমজান আলীকে স্থানীয় কেরুনতলী নামক এলাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বিশ শতক সরকারি খাস জমি। ইতিমধ্যে রমজানের নামে জমির দলিল এবং খতিয়ানও সৃজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক গিয়ে রমজানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবিসহ দলিল হস্তান্তর করবেন।

টেকনাফ সীমান্তের হতদরিদ্র রিকশাচালক রমজান আলী এ বিষয়ে বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী আমার কিশোর ছেলের একটি ম্যাসেজেরও এরকম দাম দিলেন? এটাতেই আমি বেকুব হয়ে গেলাম। একটি মোবাইল ম্যাসেজেই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)।’

রিকশাচালক রমজান আলীর প্রতিবেশী টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন সালিশি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন সিকদার জানান- হতদরিদ্র রমজান আলীর মতো নৌকা পাগল মানুষ এলাকায় দ্বিতীয়জন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আওয়ামী লীগের জনসভা যেখানে সেখানেই থাকেন রমজান। এরকম জনসভার কারণে অনেক বেলা পরিবারের সদস্যরাও উপুষ থাকার ঘটনাও ঘটেছে। হারুন সিকদার বলেন- প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা একদম শতভাগ সঠিক স্থানে পড়েছে।