ইনানীর বয়োবৃদ্ধ ছৈয়দ আহমদের জমি জালিয়াতি করে অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাতের পায়তারার অভিযোগ

প্রকাশ: ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:২২ , আপডেট: ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:২৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


১৭ নভেম্বর, ২০২০ সংবাদ সম্মেলনের ফাইল ছবি

সালাহ উদ্দিন জাসেদ :

দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়ন মহাযজ্ঞে ভূমি অধিগ্রহণের সম্পর্ক নিবিড় হলেও অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের শেষ নেই। বছরের পর বছর ঘুরেও অধিগ্রহণের টাকা হাতে পান না ভুক্তভোগীরা। সারা দেশে ভূমি অফিসকেন্দ্রিক দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জমির প্রকৃত মালিকরা দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বর্তমান সরকারের গত দুই আমলে দেশব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাফল্যের পাশেই ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির বিষবৃক্ষ বিকশিত হয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের নিদানিয়ায় জামায়াত নেতা ছৈয়দ আলমের নেতৃত্বে একটি জালিয়াত সিন্ডিকেট একই এলাকার ৭৩ বছরের অসহায় বয়োবৃদ্ধ ছৈয়দ আহমেদ এর জমি আত্মসাতের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী বায়োবৃদ্ধ ছৈয়দ আহম্মদ জানায়, জামায়াত নেতা জালিয়াত ছৈয়দ আলমের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অসাধু সিন্ডিকেটটি ইতোমধ্যে জাল দলিল তৈরি করে আমার(ছৈয়দ আহমদ) জমি নিজেদের বলে দাবি করছে। অনেক কষ্টার্জিত জমি প্রতারক চক্রের কবল থেকে উদ্ধার করতে ন্যায়বিচার ও জালিয়াত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলাম গত ১৭ নভেম্বর, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে।

এই প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন সময়ে আমার নিলাম ইজারা মূলে ক্রয়কৃত ০২.৬৪ একর পরিমাণের জায়গাটি আত্মসাৎ করার জন্য জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দলিল সৃজন করে আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চক্রটি নানা অপচেষ্টা চালিয়েও যখন আমার জায়গাটি আত্মসাৎ করতে পারেননি। বর্তমানে এই প্রতারক চক্রটি আমাকে এবং আমার অলি ওয়ারিশানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার গভীর ষড়যন্ত্র করছে।

ছৈয়দ আহমদ আরও বলেন, আর,এস, ৮৩৯ নং খতিয়ানের ০৪/০৯/১৯৪৫ ইংরেজি তারিখে ৫৫৪ নং কবলা মূলে ছৈয়দুর রহমান মালিক হন। উক্ত ছৈয়দুর রহমানের নামে এম,আর,আর, ৮৮৪ নং খতিয়ান প্রচারিত হয়। এম,আর,আর,৮৮৪ নং খতিয়ানভুক্ত আর,এস, ৩৭৮, ৩৭৯,৩৮০ ও ৩৮১ দাগাদির মোট ০২.৬৪ একর জমির খাজনা অনাদায়ীর কারণে ছৈয়দুর রহমানের বিরুদ্ধে ২৪৭/১৯৮১—৮২ইং নং সার্টিফিকেট মোকদ্দমা হয়। উক্ত সার্টিফিকেট মোকদ্দমা মূলে ০২.৬৪ একর জমি নিলামে উঠে। ২৫/০১/১৯৮৩ ইং তারিখ ০২.৬৪ একর জায়গাটির সর্বোচ্চ নিলাম মূল্য ডাককারী হিসাবে উক্ত জায়গা নিলাম খরিদ করি এবং ২৫/০৩/১৯৮৩ ইং তারিখে নিলাম বহাল হয়। ২১/০৪/১৯৮৪ইং তারিখে আমাকে (ছৈয়দ আহমেদ পিং মৃত আবদুর রহমান) ভূমি বিক্রির সার্টিফিকেট ও বায়নানামা প্রদান করেন এবং নিলাম খরিদ মূলে উপরোল্লিখিত খতিয়ানের ০২.৬৪ একর জায়গার দখল বুঝিয়ে দেন। আমি উক্ত ০২.৬৪ একর জমির নিলাম খরিদ মূলে প্রাপ্ত হয়ে ১৯৮৪—৮৫ইং সালে ২২(১)নং মিউটেশন মোকদ্দমার হুকুম মতে এম,আর,আর, ৮৮৪ নং খতিয়ান হতে ছৈয়দুর রহমানের নাম কর্তন করে আমার নাম (ছৈয়দ আহমদ) লিপি করেন। এই প্রতারক চক্রটি আমার নিলাম খরিদা মূলে ক্রয়কৃত জমি আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা হিসাবে ১৯৮৯ ইংরেজী সালে জনৈক নুর জাহান নিলামকে চ্যালেঞ্জ করে হকসফি’র আবেদনে মিচ ১/৮৯ ইং মামলা দায়ের করেন। উক্ত মিচ মামলা মনজুর করলে তৎ বিরুদ্ধে আমি ( ছৈয়দ আহমদ) নিলাম খরিদদার জেলা জজ আদালতে মিচ আপিল ২৮/৯০ ইং দায়ের করি। উক্ত মিচ আপিল২৮/৯০ইং মামলাটি খারিজ করলে তৎ বিরুদ্ধে আমি নিলাম খরিদদার ছৈয়দ আহমদ মহামান্য হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন ১৩৮০/৯৫ ইং দায়ের করলে মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত সিভিল রিভিশন মামলা ১৯৯৯ সালে মঞ্জুর করে বিজ্ঞ নিন্ম আদালতের রায়—ডিক্রি খারিজ করে দেন এবং আমি (ছৈয়দ আহমদ) কতৃর্ক খরিদ কৃত নিলাম বহাল রাখেন। অর্থাৎ আমি (ছৈয়দ আহমদ) নিজেই নিজ নামে নিলাম খরিদের পর হতে অর্থাৎ ১৯৮৪ ইংরেজি সন হতে ১৯৯৯ইং সন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর আইনি লড়াই করে মালিক স্বত্ববান ও দখলকার অবধারিত থাকি। এরপর প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য আমার (ছৈয়দ আহমদ) চাচাতো ভাইয়ের ছেলে উখিয়ার নিদানিয়ার ছৈয়দ আলম (পিতা:- দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে আমার জায়গাটি আত্মসাৎ করার কু—মানসে উঠে পড়ে লাগে। তারই অংশ হিসাবে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমার স্বাক্ষর জাল করে ০৩/১১/১৯৮৩ইংরেজি তারিখের রেজিঃকৃত ৭২৭৭নং মুক্তিনামা দলিল প্রদান করে বলেন আমার ০২.৬৪ একর জায়গাটি তার বলে দাবী করেন। অথচ নিলাম খরিদদার মূলে সরকার কতৃক আমাকে সার্টিফিকেট ও বায়না নামা প্রদান করেন ২১/০৪/১৯৮৪ ইংরেজি সনে। প্রতারক ছৈয়দ আলম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মুক্তি নামা দলিল সৃজন করলেন ১৯৮৩ সনে। তাছাড়া মুক্তিনামা স্বত্বের দলিল না। মুক্তিনামা মূলে কাহারো স্বত্ব জায়না কিংবা স্বত্ব আসেনা ( 11 DLR 539, 19 DLR 33)।

তিনি বলেন আরও বলেন, সরকার আমাকে নিলাম খরিদদার মূলে উল্লেখিত জমির সার্টিফিকেট ও বায়নানামা প্রদান করেন ১৯৮৪ইং সনে। আর প্রতারক ছৈয়দ আলম (পিতা- মৃত আজিজুর রহমান) সেই জমির মুক্তিনামা দলিল সৃজন করলেন ১৯৮৩ ইংরেজি সনে। সরকারের কাছ থেকে উল্লেখিত জমি খরিদ করার আগে কি করে আমি মুক্তি নামা দলিল প্রদান করলাম ? এই প্রশ্ন আমি আপনাদের মাধ্যমে আবারও প্রতারক ছৈয়দ আলমের কাছে রাখলাম।

ইতিমধ্যে সরকার কর্তৃক আমার নিলাম খরিদকৃত জায়গা ১০৪৬ খতিয়ান থেকে ১.৫৬ শতক জমি অধিগ্রহণ করেছে। উক্ত অধিগ্রহণ কৃত জায়গার এল,এ মামলা নং ০৭/২০১৮—১৯ ইং রোয়েদাদ নং- ০২, ০৭, ০৮, ০৯ তফশিলঃ বিএস খতিয়ান নং ১০৪৬ ও বিএস দাগ নং ৩৪৪২। ০৭/২০১৮—১৯ইং নং এল,এ মামলার অধিগ্রহনকৃত জায়গার উপর যেহেতু বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, সেহেতু বর্ণিত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষকে অধিগ্রহণকৃত জায়গার ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান না করতে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অপর ১৩৪/২০২০ইং নং মামলা দায়ের করা আছে। গত ২৬/১১/২০২০ ইং তারিখে ৮ ধারা নোটিশ দেওয়ার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), কক্সবাজার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করি।

জালিয়াত ছৈয়দ আলম জমির ভুয়া মালিক সেজে আমার অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা তুলার জন্য দূর্ণীতিবাজ দালালদের মাধ্যমে উঠেপড়ে লেগেছে।

জানা গেছে৷ ইনানি এলাকায় অধিগ্রহণের শিকার প্রকৃত ভূমি মালিক ছৈয়দ আহমেদ জালিয়াত চক্রের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জালিয়াত চক্র জাল দলিল তৈরি করে নিজেদের ভূমি মালিক দাবি করে ডিসি অফিসের এলএ শাখা এবং স্থানীয় ভূমি অফিসগুলো বসে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। প্রকৃত ভূমি মালিকদের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাগড়া দিচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় মন্ত্রী-এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে তদবিরও করছে।