ক্রীড়া ডেস্ক:
ব্যাটসম্যানরা এনে দিয়েছিলেন দারুণ সংগ্রহ, পরে বোলাররাও দেখালেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ব্যাটিং-বোলিংয়ের এই মেলবন্ধনে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর বিপক্ষে ফিরতি পর্বের ম্যাচটিতে ২৫ রানের দারুণ এক জয় পেয়েছে বেক্সিমকো ঢাকা। টানা তিন ম্যাচ হারের পর ঢাকার এটি পরপর দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে জেতার পর রাজশাহীর এটি হ্যাটট্রিক পরাজয়।

আগে ব্যাট করে ইয়াসির আলি রাব্বির ফিফটির সঙ্গে আকবর আলির ঝড়ো ক্যামিও ১৭৫ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল ঢাকা। জবাবে ফজলে রাব্বি ও রনি তালুকদার দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ঠ প্রমাণিত হয়নি। মুক্তার আলি ও শফিকুল ইসলামের বোলিং তোপে ১৫০ রানে অলআউট হয়ে গেছে রাজশাহী, ঢাকা পেয়েছে ২৫ রানের জয়।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ হন রাজশাহীর দুই ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রবিউল ইসলাম রবির ওভারে ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত, করেন ৬ বলে ৫ রান। রুবেল হোসেনের পরের ওভারের প্রথম বলে চার মারলেও, পরের বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো আকবর আলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন ইমন। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৬ রান।

দুই ওপেনাররের বিদায়ের পর নিজেদের ব্যর্থতার ধারা আরও লম্বা করেন মোহাম্মদ আশরাফুল। পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার পর অষ্টম বলে পড়েন লেগ বিফোরের ফাঁদে। আগের চার ম্যাচে সবমিলিয়ে ৫৬ রান করা আশরাফুলের এই ম্যাচে সংগ্রহ ৮ বলে ১ রান। মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে পড়ে যায় রাজশাহী।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে পাল্টা আক্রমণ করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার ও ফজলে রাব্বি মাহমুদ। শুরুতে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন রনিই। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে প্রথম বলে চার হাঁকানোর পর দ্বিতীয় বল সোজা সীমানার ওপারে পাঠান রনি। পরের ওভারে নাসুম আহমেদের বোলিংয়ে স্লগ সুইপে দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কা হাঁকান তিনি। দশ ওভার শেষে রাজশাহীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৩ রান।

নাসুমের করা ১১তম ওভারে ছক্কা-চারে ১৫ রান নিয়ে নেন ফজলে রাব্বি ও রনি। পরের ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই জুটি ভেঙে দেন মুক্তার আলি। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পে টেনে আনেন রনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ৩ ছয়ের মারে ২৪ বলে ৪০ রান। তার বিদায় ভাঙে ৪৬ বলে ৬৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।

তবে এরপরও লড়াই চালিয়ে যান ফজলে রাব্বি। শফিকুল ইসলামের করা ১৩তম ওভারের শেষ দুই বলে হাঁকান ছক্কা ও চার। কিন্তু পরের ওভারে বড়সড় এক ধাক্কা খায় রাজশাহী। আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ ব্যাটিং করা মেহেদি হাসানকে মাত্র ১ রানে ফিরিয়ে দেন মুক্তার আলি। পরে আরেক সেট ব্যাটসম্যান ফজলের রাব্বি উইকেটও নেন মুক্তার।

যদিও আউট হওয়ার আগে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন ফজলে রাব্বি। মুক্তারের ওভারেই লংঅফ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছার পরের বলেই মারেন দারুণ এক চার। পরের বলে আবারও বড় শটের খোঁজে লংঅনে ধরা পড়েন ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৪০ বলে ৫৮ রান করা ফজলে রাব্বি। এর পরের ওভারেই রাজশাহীর শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে (৯ বলে ১১) ফেরান শফিকুল।

তখন ঢাকার জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবু লড়াইয়ের আভাস দেন ফরহাদ রেজা। শেষ ৩ ওভারে যখন জয়ের জন্য দরকার ৪৮ রান, তখন মুক্তারের করা ১৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে ২, ৬ ও ৬ মেরে ১৪ রান তুলে নেন ফরহাদ। কিন্তু পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে প্রতিশোধের পাশাপাশি ম্যাচে নিজের চতুর্থ উইকেট নিয়ে নেন মুক্তার।

ফরহাদের বিদায়ের পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন শফিকুল ও রুবেল। শেষ ওভারের প্রথম বলে এবাদত হোসেনের উইকেট নিয়ে রাজশাহীকে ১৫০ রানেই অলআউট করে দেন রুবেল। ফলে ২৫ রানের সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ঢাকা।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে চমক দেখায় ঢাকা। বাঁহাতি নাইম শেখের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করতে পাঠানো হয় অফস্পিনার নাইম হাসানকে। তবে এই বাজি কাজে লাগেনি। ইনিংসের পঞ্চম বলেই মেহেদি হাসানের স্পিনে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন চার বলে ১ রান করা নাইম হাসান। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। দ্বিতীয় ওভারেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি ঢাকা। প্রথম দুই ওভারেই আসে ৩ রান করে।

তৃতীয় ওভারে হাত খুলে মারেন মুশফিক। মেহেদির করা সেই ওভারের চতুর্থ বলে হাঁকান বাউন্ডারি ও শেষ বলে মারেন ওভার বাউন্ডারি। মাঝে পঞ্চম বলে রিভার্স সুইপে পান আরও দুই রান। সেই ওভার থেকে আসে মোট ১৩ রান। কিন্তু এরপরও পাওয়ার প্লে’তে ৩২ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা। কেননা একদমই ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না বাঁহাতি ওপেনার নাইম শেখ।

পাওয়ার প্লে শেষে মুশফিকের রান যেখানে মুশফিকের সংগ্রহ ছিল ১৬ বলে ২১ রান, সেখানে নাইম সমানসংখ্যক বলে করেন মাত্র ৮ রান। পাওয়ার প্লের পরেও এটি পুষিয়ে নিতে পারেননি নাইম, আরাফাত সানির করা অষ্টম ওভারে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে ১৯ বলে করেন মাত্র ৯ রান। রান পাননি তানজিদ হাসান তামিমও। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর করা পরের ওভারে লেগ বিফোর উইকেট হন তানজিদ, করেন চার বলে ২ রান।

তানজিদ-নাইমরা হতাশ করলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকাটা সচল রেখেছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তার কল্যাণেই মূলত প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৪ রান করতে পারে ঢাকা। কিন্তু ১১তম ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিক। মুগ্ধর অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের হাতে ধরা পড়েন। ঢাকার অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৯ বলে ৩৭ রান।

এরপর দারুণ জুটি গড়েন আগের ম্যাচের নায়ক ইয়াসির আলি রাব্বি ও তরুণ ব্যাটসম্যান আকবর আলি। দুজনের পঞ্চম উইকেট জুটিতেই মূলত লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছে ঢাকা। দুই প্রান্তে সমান তালেই ব্যাটিং করেছেন ইয়াসির ও আকবর। তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান ইয়াসির, ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন আনিসুল ইসলাম ইমন। এতে যেন নতুন শুরুর সাহসটাও পেয়ে যান ইয়াসির।

ক্যাচ ড্রপ হওয়ার পর খেলা ৭ বলে ২০ রান নিয়ে মাত্র ৩২ বলে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন ইয়াসির। ব্যক্তিগত মাইলফলকে পৌঁছার পরও থামেননি। চালিয়ে খেলেছেন শেষপর্যন্ত। মুগ্ধর করা ১৮তম ওভারে তিন চারের সঙ্গে এক ছয়ের মারে হয় ২৩ রান, এবাদত হোসেনের করা পরের ওভারে আরও তিন চারের সঙ্গে দারুণ রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেটের কল্যাণে ১৫ রান তুলে নেন ইয়াসির ও আকবর।

ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে এ দুজনের জুটি ভাঙেন ফরহাদ রেজা। নিখুঁত ইয়র্কারে সরাসরি বোল্ড হন ইয়াসির। আউট হওয়ার আগে ৯ চারের সঙ্গে ১ ছয়ের মারে ৩৯ বলে ৬৭ রান করেন তিনি। আকবরের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ হয় ৫৫ বলে ঠিক ১০০ রান। চলতি টুর্নামেন্টে যেকোন উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড। এর আগে কোনও ম্যাচে শতরানের জুটি দেখা যায়নি।

ইয়াসির ফিরে যাওয়ার পর শেষ দুই বলে স্ট্রাইক পান আরেক সেট ব্যাটসম্যান। পঞ্চম বলে লংঅন দিয়ে বড় ছক্কা হাঁকানোর পর শেষ বলে নেন আরও ২ রান। শেষপর্যন্ত ২৩ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন আকবর। ইয়াসির ও আকবরের এ ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে ঢাকা।

বল হাতে রাজশাহীর পক্ষে ২ উইকেট নিয়েছেন মুকিদুল মুগ্ধ। এছাড়া ফরহাদ রেজা, মেহেদি হাসান ও আরাফাত সানির শিকার ১টি করে উইকেট।