মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে মোট ৫ হাজার ৫ শত ২৯ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে-৭৩ জন স্থানীয় নাগরিক এবং ১০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১’৫০% ভাগ। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বস্ত সুত্র মতে, কক্সবাজারের নাগরিক এমন আরো ১০ জন কক্সবাজারেই করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যূবরণ করেছেন। যাদের হিসাব কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রদত্ত তথ্যের মধ্যে নেই। জেলার বাইরে মৃত্যূবরণ করা এই ১০ জন সহ কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা মোট ৯৩ জন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান মতে, ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ৫ হাজার ৫ শত ২৯ জন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, স্থানীয় নাগরিক ৫১৬২ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৩৬৭ জন। পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ টেস্টে এ পর্যন্ত মোট ৩২৯ জনের রিপোর্টও ‘পজেটিভ’ এসেছে। তারমধ্যে, স্থানীয় নাগরিক ৩২৩ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৬ জন।
রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে (ভাসান চরে যাওয়া সহ) ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে মোট ১লক্ষ ৭৯হাজার ৫৯১ টি পরিবারে ৮লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। যারা সব মিলিয়ে মাত্র ৬ হাজার ৫ শত একর ভূমিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো, ছোট্ট জায়গায় এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করেও করোনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য এসেছে। কোভিড-১৯ সংক্রামনে কঠিন পরিস্থিতিতেও ৩৪ টি ক্যাম্পে প্রায় সোয়া ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাকে সরকারি ও ডাব্লিউএইসও এর সকল স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ এবং মানাতে পেরেছে। কক্সবাজার আরআরআরসি অফিস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিলো বহুমুখী জরুরি বিভিন্ন পদক্ষেপ। যার ফলে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৩৬৭ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মাত্র ১০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।
শুক্রবার ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৫৫২৯ জন রোগীর মধ্যে ২৬৪৮ জন রোগী নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা শীর্ষে অবস্থান করছে। ৮৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৫০৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ৫১৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ৩৭৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে রামু উপজেলা পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ৩৪৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ২০৯ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে এবং কুতুবদিয়া উপজেলা ৯৫ জন করোনা রোগী নিয়ে ৮টি উপজেলার মধ্যে সর্বনিম্মে অবস্থান করছে। তবে মাত্র প্রায় দেড় লক্ষ জনসংখ্যা অনুপাতে কুতুবদিয়া উপজেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একেবারে কমও নয়।
আবার উখিয়া উপজেলার ৮৩০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ২৮৪ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী এবং ৫৪৬ জন স্থানীয় নাগরিক। একইভাবে টেকনাফ উপজেলার ৫১৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮৩ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী এবং ৪৩০ জন স্থানীয় নাগরিক। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. সাকিয়া হকের প্রণীত দৈনিক ম্যাপিং থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বৃহস্পতিবার ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাস এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৪ শত ৭০ জনের। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলার নাগরিক এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে ৪৯৬৩৮ জনের, রোহিঙ্গা শরনার্থীর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে ১৮৯৩৬ জনের, বান্দরবান জেলার নাগরিক এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে ৬০৫৭৪ জনের এবং চট্টগ্রাম জেলার নাগরিক এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে ৫৩২২ জনের।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৯৪০ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮৯’৪১% ভাগ। একইসময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে রয়েছে ৪১২ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছে ৮৬ জন। এরমধ্যে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ২৭ জন, টেকনাফ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০ জন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইসোলেশন সেন্টার গুলোতে ৪৯ জন। আবার এ ৪৯ জন আইসোলেশনে থাকা রোগীর মধ্যে ১৩ জন স্থানীয় নাগরিক ও ৩৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।
৪ ডিসেম্বরের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল :
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে শুক্রবার ৪ ডিসেম্বর ৫৪৯ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে ৬ জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলার ৪ জন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১ জন এবং আগে করোনা আক্রান্ত হওয়া ১জন পুরাতন রোগীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া যায়। একইদিন বাকী ৫৪৩ জনের স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া আসে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া সিবিএন-কে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার জেলায় শুক্রবার করোনা ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ৪ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ২জন, চকরিয়া উপজেলার ১জন ও পেকুয়া উপজেলার ১জন রোগী রয়েছে। এনিয়ে, কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৫৫২৯ জনে পৌঁছেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।