বিদেশ ডেস্ক:

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার পর থেকেই গুঞ্জন চলছে; সৌদি আরবও একই ধারবাহিকতা রক্ষা করতে যাচ্ছে কিনা। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপন বৈঠকের খবর সামনে আসার পর সেই গুঞ্জন জোরালো হয়েছে। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন বলছে, আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে পারে রিয়াদ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও একই ধরনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

একদিন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দখলদার শক্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে উপনীত হয় আমিরাত ও বাহরাইন। ইসরায়েলের জন্মলগ্ন থেকেই বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র এটিকে একটি দখলদার শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ফলে স্বভাবতই এতোদিন ধরে ইসরায়েলকে বয়কট করে আসছিল তারা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের নাটকীয় উন্নতির খবর এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বহু বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি মার্কিন নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে জন্ম নেওয়া ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকারের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান। এর দুই বছরের মাথায় রিয়াদের দুই মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।

দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলমুখী বা ইসরায়েল থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলোকে সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদের এ নীতির পরিবর্তন হয়েছে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সৌদি আকাশসীমা হয়ে বাহরাইনে পৌঁছায় ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলকে বহনকারী ফ্লাইট। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, অচিরেই বাহরাইন ও আমিরাতের পথে হাঁটবে রিয়াদ।

তবে সৌদি উপদেষ্টা ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত) ‘মূলত মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের কারণে ইসরায়েল সম্পর্কিত একটি চুক্তি থেকে সরে এসেছেন।’সৌদি সহযোগীদের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, যেহেতু ‘ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কাজে লাগানো হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় যুবরাজ এই ধরনের কোনো চুক্তি করতে আগ্রহী নন।’

রিয়াদের এক কূটনীতিকের বরাতে রয়টার্সও একই পূর্বাভাস দিয়েছে। ওই ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তি অন্যান্য ইস্যু, বিশেষত সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো বাইডেন প্রশাসনের নজর থেকে দূরে রাখবে।

গত ২২ নভেম্বর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমানের গোপন বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মার্কিন চাপের ফলেই এই বৈঠক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠক বাইডেন প্রশাসনের জন্য বার্তা দিচ্ছে যে, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক উন্নত করার ক্ষেত্র এখন প্রস্তুত। অন্যদিকে, বৈঠকটি ইরানের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক জোট গড়ে তোলার বিষয়ে তেহরানকেও একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের আগেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইস্যুতে সৌদি নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অসম্মতি জানিয়েছেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করতে ও ওই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জোট গড়ে তুলতে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে চান যুবরাজ সালমান।

গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য নিজেদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব। এদিকে, সৌদি সফর শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ফক্স নিউজকে জানান, ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’র আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আরও আরব প্রতিবেশী দেশের সাধারণীকরণ চুক্তি হবে বলে আশা করেন তিনি।