নিজস্ব প্রতিবেদক:
পূবালী ব্যাংক মহেশখালী শাখা থেকে পরস্পর যোগসাজসে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম (৫০)সহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

ব্যাংক ম্যানেজার ছাড়াও মামলার বাকি দুই আসামী হলেন- মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা সিকদারপাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ রশিদের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮) ও তার ভাই জিয়াউর রহমান (২৩)।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে শামসুল আলম (৮২) নামের ভুক্তভোগি এ মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি দীর্ঘক্ষণ শুনানী শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সুপারকে তদন্তপূর্বক দ্রুত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

মামলার বাদি মহেশখালীর হোয়ানক কেরুনতলীর বাসিন্দা মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে।

বাদির পক্ষে প্রধান কুশলী ছিলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী রমিজ আহমদ।

এ সময় এডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুছ, এডভোকেট আবু মুসা মোহাম্মদ, এডভোকেট আবুহেনা মোস্তফা কামাল, রাশেদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

বাদির পক্ষে নিয়োজিত প্রধান আইনজীবী রমিজ আহমদ জানান, মহেশখালীর মাতারাবড়িতে নির্মানাধীন কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সরকার অনেক জমি অধিগ্রহণ করে। সেখানে শামসুল আলমের জমি পড়ে। সেই জমির ক্ষতিপূরণের বাবদ কক্সবাজার এলএ শাখা থেকে অনেক চেষ্টা তদবির করে ২টি চেক পান। যার একটিতে ৭৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫৯১ টাকা। অরপর চেকে ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার ২০৪ টাকা। উক্ত টাকা পূবালী ব্যাংক মহেশখালী শাখায় শামসুল আলমের হিসাব নং- ০৪৪৩১০১০০৬৩৮০-তে দুইটি চেকমূলে জমা প্রদান করেন। মিজানুর রহমান সম্পর্কে শামসুল আলমের ভাতিজা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তাকে বিশ্বাস করেন। সেই সুবাদে জমা টাকা সম্পর্কে সে জানতো। এভাবে সে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথেও তার সম্পর্ক। ইত্যবসরে ভাতিজা মিজানুর রহমান ও ব্যাংক ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের পরামর্শে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ৭০ লক্ষ টাকা ‘ফিক্সট ডিপোজিট’ ব্যবস্থা করেন শামসুল আলম। পরবর্তীতে ‘প্রসেসিং বাকি আছে’ জানিয়ে ম্যানেজারের দেখিয়ে দেয়া মতে ফরম ও বিভিন্ন কাগজে দস্তখত করেন। ৫ দিন পরে তাকে আবার ব্যাংকে যেতে বলেন। কথা অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর ব্যাংকে যান শামসুল আলম। তখন আবারো ব্যাংক ম্যানেজারের রুমে বসিয়ে তার নিকট থেকে ফরম ও বিভিন্ন কাগজে দস্তখত নেয়া হয়। এরপর ফিক্সট ডিপোজিটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে জানালে তিনি চলে যান। শামসুল আলমের ‘ফিক্সট ডিপোজিট’ করা ৭০ লক্ষ টাকার মুনাফার বিষয়ে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর জানতে চাইলে ব্যাংকে মাত্র ২০ হাজার টাকা জমা আছে বলে জানানো হয়। পরে ব্যাংক থেকে হিসাব বিবরণীয় সংগ্রহ করে দেখেন, যেখানে ১ বছরে মুনাফাসহ অনুমান ৭৬ লক্ষ টাকা জমা থাকার কথা ছিল সেখানে জমা আছে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। জমা করা টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাওয়া!

এ বিষয়ে ম্যানেজার শফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেন শামসুল আলম। জবাবে জানানো হয়, শামসুল আলম নাকি ভাতিজা মিজানুর রহমানকে ও.ডি লোন হিসেবে ৫০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। অথচ সে বিষয়ে শামসুল আলম মোটেও অবগত নন। প্রকৃতপক্ষে মিজানুর রহমানের নিকট থেকে উৎকোচের বিনিময়ে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।

ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড পর্যবেক্ষণপূর্বক তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন এডভোকেট রমিজ আহমদ।

ভুক্তভোগি শামসুল আলম জানান, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৪০ লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে বাদির নামে ক্যাশ উত্তোলন দেখিয়ে মিজানুর রহমান ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছেন। যাতে জিয়াউর রহমান ও ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জড়িত।

তিনি মনে করেন, ১৭ নভেম্বরের ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করলে অনায়াসেই ঘটনা ধরা যাবে এবং জালিয়াতির ঘটনা স্পষ্ট হবে। ডকুমেন্টস তৈরী, টাকা উত্তোলন ও বহনে তিনজন সরাসরি জড়িত রয়েছে।

নিজের ‘ফিক্সট ডিপোজিট’ থেকে আত্মসাৎকৃত ৫০ লক্ষ টাকা উদ্ধার ও দোষিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগি শামসুল আলম।