বাসস॥
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রশ্নে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করতে ৫৭ টি মুসলিম দেশের সংগঠন ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চলমান বৈঠকে সূচিত তহবিল সংগ্রহ অভিযানে বাংলাদেশ ৫ পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করেছে।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)তে বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্থায়ী প্রতিনিধি ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূূত ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘গাম্বিয়াকে আইনি লড়াইয়ে সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ওআইসির তহবিলে এ অর্থ প্রদান করেছি।’
নাইজারে ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলে (সিএফএম) ঢাকার প্রতিনিধিদলে নেতৃত্বদানকারী পাটোয়ারী বাসসকে বলেন, ওআইসির জেনারেল সেক্রেটারিয়েট এখন আইসিজে-তে গাম্বিয়ার লড়াইয়ে সহায়তার জন্য একটি বিশেষ হিসাব খুলেছে। আর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিও তহবিলের জরুরি প্রয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী দাউদা এ জালো সিএফএম-এ রোহিঙ্গা মামলার সর্বশেষ আপডেট উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘এ আইনি মামলার জন্য আমি ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর কাছে জরুরি, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের আহ্বান জানাচ্ছি। সিএফএম-এ রোহিঙ্গা সঙ্কট মূল আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে আসে।
তিনি বলেন, মামলাটি চালাতে বিশেষ করে আইনজীবিদের অর্থ প্রদানের জন্য গাম্বিয়ার প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার। এই মামলার বাদীপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি নামী আইন সংস্থাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে জালো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় আইনি সংস্থাটি সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল থেকে যে আইনি সেবা দিয়ে আসছে সেজন্য তারা এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য অর্থ পায়নি। সবেমাত্র এ মাসে এই আইনি সংস্থাকে তিন লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে, যা তাদের প্রাপ্য পরিমাণের ১০ শতাংশেরও কম।’
গাম্বিয়ার মন্ত্রী বলেন, এই মামলাটির লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি চূড়ান্ত ও স্থায়ী সমাধান। তিনি সতর্ক করে দেন যে, আইসিজে-তে রোহিঙ্গা সমস্যা সংক্রান্ত ওআইসির সম্ভাব্য যাবতীয় পদক্ষেপ মামলার স্বার্থে তার দেশের সাথে সমন্বয় করে পরিচালনা করা উচিত।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, ওআইসির যে কোনো অসমন্বিত পদক্ষেপ মামলাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বিষয়টিকে আরও জটিল করতে পারে।
ওআইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা ছাড়াও ওআইসির ৫৭ সদস্যের মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক ও নাইজেরিয়া এ পর্যন্ত আইসিজে এ মামলায় গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ওআইসির দু’দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৪৭ তম সিএফএম অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁর দেহে কোভিড-১৯ সনাক্ত হওয়ায় তিনি তার নির্ধারিত নাইজার সফর বাতিল করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ এই রোহিঙ্গা সংকটের কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের জন্য একক বৃহত্তম আবাসস্থলে পরিণত করেছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এক নির্মম সামরিক অভিযান শুরু
করার পর রাখাইন রাজ্যের ১.১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা তাদের জন্মভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, যাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়।
গাম্বিয়া গত বছরের নভেম্বর মাসে ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করে। ১০-১২ ডিসেম্বর আইসিজে তার প্রথম শুনানি করে।
গত ২৩ জানুয়ারি আইসিজে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার পরবর্তী ঘটনা রোধে অস্থায়ী পদক্ষেপের আদেশ দেওয়ার ঐতিহাসিক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।
এ সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ঢাকায় বাসসকে বলেছিলেন যে, এই সিএমএফ মিয়ানমারের ওপর তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে ‘জবাবদিহিতা ও বিচারিক ফ্রন্ট’ থেকে নতুন করে চাপ প্রয়োগ করবে।
তিনি বলেন, ‘ওআইসি রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ওআইসির সকল সদস্য জাতিসংঘে এ ইস্যুতে আমাদের দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে আসছে।’