নিউজ ডেস্ক:
নব্বই’র গণঅভ্যুত্থানে আত্ম বলিদানের জন্য শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএমএ’র একটি সভায় যোগ দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনের সঙ্গে একই রিকশায় যাওয়ার পথে টিএসটি’র মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

তখন একদিকে সামরিক সরকারের পতনের দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলন, অন্যদিকে বিএমএ’র নেতৃত্বে গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি বাতিল ও চিকিত্সকদের ৩০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন চলছিল। সেদিন ডা. মিলনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।

মিলনের মৃত্যুর খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে চিকিত্সকদের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। এরই মধ্যে ডা. মিলন হত্যার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে চিকিত্সকরা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। অন্যদিকে তত্কালীন ১৫ দলীয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পরের দিন ২৮ নভেম্বর ডা. মিলন হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ডা. মিলন ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের তৎকালীন যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডা. মিলন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ১৯৯০ সালের এই দিনে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। সেদিনের তার সেই আত্মত্যাগ চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করে, সুগম হয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার পথ।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডা. মিলনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তখনকার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। সেদিনই দেশে জরুরি আইন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জরুরি আইন, কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে বারবার রাজপথে নেমে আসে। অবশেষে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে ডা. মিলন ছাড়াও যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, নূরুল হুদা, বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার রাজপথ। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ভোট ও ভাতের অধিকার। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাদের অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে সবসময় স্মরণ করবে।

দিবসটি উপলক্ষে এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । এর মধ্যে রয়েছে, সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে শহীদ মিলনের সমাধিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও সেখানে আলোচনা সভা, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ দেশবাসীর সাথে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আওয়ামী লীগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করবে।