এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষনার আগেই কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদে চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। একইসঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশনিয়ে জনগনের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করেছেন। অনেকে মসজিদ-মাদরাসায় সাধ্যমতো সহযোগিতাও দিচ্ছেন। প্রার্থীরা নানাভাবে জনগনের মন জয়ের চেষ্টা করে চলেছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের স্থানীয় পর্যায়ের চার নেতা এবার চেয়ারম্যান পদে নৌকার কাণ্ডারী হতে বেশ তৎপর রয়েছেন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের জেলা-উপজেলার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। আবার মাঠপর্যায়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকা সষে বেড়াচ্ছেন।

অপরদিকে বিএনপি থেকে প্রার্থীতা হওয়ার মনোবাসনা নিয়ে ধানের শীষ প্রতীক পেতে এখন থেকেই জোরচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন দুইজন। অবশ্য চকরিয়া উপজেলার অন্যসব ইউনিয়নের মতো এখানেও চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে একক সিদ্বান্ত দেবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী (বর্তমানে ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত) সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিতে চান সাবেক ছাত্রনেতা আহসানুল কাদের চৌধুরী সাব্বির ও বদরখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আকবর। অবশ্য সাবেক ছাত্রনেতা সাব্বির ২০১৬ সালের নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে ছিলেন। তিনি এলাকায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের আস্থাভাজন হিসেবে অধিক পরিচিতি।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগ-বিএনপির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারও চেয়ারম্যান পদে লড়াই করার ঘোষনা দিয়েছেন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সাবেক ছাত্রনেতা আনম হেফাজ সিকদার। আর জাতীয় পাটি (এরশাদ) থেকে ভোটযুদ্ধে থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বদরখালী ইউনিয়ন জাতীয় পাটির সভাপতি নাছির উদ্দিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার কাণ্ডারি হতে চান বর্তমান চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক খাইরুল বশর, বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একে ভুট্টো সিকদার।

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল বশর বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্ঠা করবেন, তবে না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবেন।

অবশ্য সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে এবারও নৌকার মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদি নির্ভেজাল আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ। তাঁর বাবা মরহুম আবদুল হান্নান বিএ ছিলেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বদরখালী সমিতির সাবেক সভাপতি। নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, গতবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও কয়েকজন স্থানীয় নেতা দলের সিদ্বান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেইকারণে আওয়ামীলীগের ভোটব্যাংক ভাগ হয়ে যায়। মুলত আওয়ামীলীগের কতিপয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে তিনি নৌকাকে বিজয়ী করতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। কারণ প্রিয় বদরখালীবাসি এবং দলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। আমার পরিবারের সঙ্গে আছে।

নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দল-মতের উর্ধ্বে থেকে জনগনের কল্যাণে কাজ করেছি। বদরখালীকে উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মডেল ইউনিয়নে রূপান্তর করেছি। আজ বদরখালী ইউনিয়ন সার্বিক বিবেচনায় জেলার একটি মডেল ইউনিয়নে পরিচিতি পেয়েছে। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে জনগনের পাশে ছিলাম, জনগনের মাঝে সরকারি সবধরণের সুবিধা নিশ্চিত করেছি। এখনো জনগনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার মসজিদ-মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। বদরখালীবাসির সব ভালো কাজের সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার আছি।

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী অপরপ্রার্থী মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে হবে। আমি আশাবাদি নৌকার মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হবো।

কাউন্সিলরদের ভোটে বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন একে ভুট্টো সিকদার। তিনিও এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আছি। নেতাকর্মী এবং সর্বসাধারণের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ আছে। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও ভালো সর্ম্পক। আমি আশাবাদি দলীয় মনোনয়ন পেলে ইনশাল্লাহ শতভাগ বিজয়ী হবো।

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক পেশায় শিক্ষক আনম হেফাজ সিকদার এবারও চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তবে তিনি এবারও প্রার্থী হবেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তিনি বলেন, বদরখালীর আপামর জনগনের ভালোবাসা আমার সঙ্গে আছে। গতবারের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আমি হেরে যাই। জনগনের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অল্প ভোটের ব্যবধানে আমি হেরে গেলেও বদরখালীবাসির পাশে থেকেছি। বিপদে-আপদে খোঁজ-খবর নিয়েছি। ইনশাল্লাহ আমি আশাবাদি এবারও বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হবো। এবার বদরখালীবাসি ভালোবাসা আর ধৈয্যের প্রতিদান দেবে।

উল্লেখ্য আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও নুরে হোছাইন আরিফ সম্পর্কে শ্যালক-দুলাভাই। অপরদিকে বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একে ভুট্টো সিকদার ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনম হেফাজ সিকদার আপন সহোদর। তদমধ্যে ভুট্টো সিকদার পরিবারে সবার বড়।

ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, মাতামুহুরী উপজেলার অধীনে সাতটি ইউনিয়ন আছে। সবেমাত্র নির্বাচনী আবহ শুরু হয়েছে। কোন কোন ইউনিয়নে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের পোস্টার ব্যানার শোভা পাচ্ছে। অনেকে নেতাকর্মী ও জনগনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ যখনই পুরোদমে শুরু হবে, তখন কেন্দ্র থেকে জেলা আওয়ামীলীগ হয়ে নির্দেশনা আসবে। আর তখনই আমরা সিদ্বান্ত নেব কোন ইউনিয়নে কোন প্রার্থী এগিয়ে, জনপ্রিয়তা আছে এবং কোন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে বিজয়ী হবে, সেটি সময় বলে দেবে। আপাদত পরিবেশ পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।