শাহেদ মিজান, সিবিএন:

শিক্ষকতা দিয়ে সমাজ পরিবর্তনে অংশ নিয়ে বিশ্ব জয় করলেন কক্সবাজারের আলোকিত তরুণী রিমা সুলতানা রিমু। তিনি বিবিসি ঘোষিত সারা বিশ্বের ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিবিসি এই তালিকা প্রকাশ করেছে। রিমুর এই চমক লাগানো অর্জন বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল গৌরবের বিষয়। তাঁর এই অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আলোকিত করেছে। রিমু ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে আরো এক নারী এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিনি একজন যৌন কর্মী।

সূত্র মতে, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০০ জন নারীর একটি তালিকা প্রকাশ করে বিট্রিশভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। চলতি বছরও এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দান এবং প্রভাব বিস্তারের ওপর ভিত্তি করে এ ১০০ জন নারীকে নিয়ে এ তালিকা তৈরি করা হয়। ২০২০ সালের বিবিসির এই নারীদের তালিকায় বাংলাদেশের দু’জন নারী স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে রিমা সুলতানা রিমু অন্যতম। তিনি একজন শিক্ষক এবং কক্সবাজারের ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিস এর একজন সদস্য।

বিবিসি বলছে, এবার ১০০ নারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। যারা পরিবর্তন আনতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মহামারির এই কঠিন সময়েও তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন মূলত তাদেরই এ তালিকায় রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীদের উন্নয়নের নিয়োজিত সংস্থা ‘জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা’ কর্তৃক পরিচালিত ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিস এর কক্সবাজারের একজন গর্বিত স্বেচ্ছাসেবী সদস্য রিমা সুলতানা রিমু। তাঁর বাড়ি রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার আবদুর রহিম ও খালেদা বেগম দপ্ততির কন্যা।

‘জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা’ সূত্রে জানা গেছে, ৩ বছর ধরে তরুণী রিমা সুলতানা রিমু ‘জাগো নারী ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক পরিচালিত ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিস এর কক্সবাজারের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সব সময়। স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেয়ার পাশপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা শুরুর পর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দানে কাজ শুরু করেন রিমা সুলতানা রিমু। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এই মহৎ ও সাহসী কাজে জড়িত রয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বাল্য বিবাহ রোধ, যৌতুক, সহিংসতাসহ সামাজিক নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন আলোকিত তরুণী রিমা সুলতানা রিমু। এসব সামাজিক নানা কাজের মধ্যে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি বিশ্ব জয় করলেন।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আলোকিত তরুণী রিমা সুলতানা রিমু মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, কোনো সম্মাননা পাবো- এই আশাতে নয়; সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমি সেবামূলক কাজে জড়িত হয়েছি। আমার এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এতো বড়ো সম্মাননা পাবো কখনো ভাবিনি। এই সম্মাননা পেয়ে আমি নিজেকে গর্বিত এবং ভাগ্যবান মনে করছি।

তিনি বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক হলেও আমার সব কাজে সব সময় সমর্থন দিয়েছেন। পুরো পরিবার আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তাদের সমর্থন ও উৎসাহে আমার এই অর্জন।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে রিমু বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতেও শিশু শিক্ষা এবং সুবিধা বঞ্চিত নারীদের উন্নয়নের কাজ করতে চাই। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য আমি কাজ করতে চাই; যারা সম্ভবনাময়ী সত্তে¡ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে সব সময় বঞ্চিত থেকে যায়।’

তাঁর গর্বিত পিতা আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার মেয়ের এই অসামান্য অর্জনে আমিসহ পুরো পরিবার বেশ খুশি হয়েছি। আমার মেয়ে ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত রাখবে। এই জন্য সব ধরণের সহযোগিতা আমরা করে যাবো।’

জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা বলেন, ‘রিমুর এই অর্জন শুধু জাগো নারী বা কক্সবাজারের জন্য নয়; এটা পুরো বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটা অর্জন। তার এই অর্জনে নিশ্চয়ই দেশের সব মানুষ আনন্দিত হয়েছেন। তাঁর অসামান্য অর্জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টার প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি।’

রিমুর এই অর্জনের সুদূর প্রসারী প্রভাব সম্পর্কে শিউলি শর্মা বলেন, ‘নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক নারী; বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে নারীরা এখনো সামাজিক ও পারিবারিক বাধার সম্মুখীন। রিমুর এই অর্জন পুরো বাংলাদেশের নারীদের এরকম বাধাকে সরিয়ে দিতে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। একই সাথে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজের ক্ষেত্রে রিমুর এই অর্জন ব্যাপক উৎসাহ যোগাবে।’