মোহাম্মদ উল্লাহ ,চকরিয়া :

ঘটনার বিষয়বস্তু যেমন এক, তেমনি ব্যক্তিও এক এবং আইনী মতামত প্রদানকারী আইনজীবিও একই ব্যক্তি। কিন্তু আইনী মতামত প্রদান করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। এর ফলে বিচার প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া উপজেলার ভেওলা মানিকচর ইউনিয়নে। ২৩নভেম্বর(মঙ্গলবার)বিয়ষটি সাংবাদিকের কাছে তুলে ভুক্তভোগি রেহেনা বেগমের পরিবার।

বিস্তারিত তথ্যে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার পূর্ব ড় ভেওলা ইউনিঢনের ছাদেক আলীর পুত্র আবদুর রশীদের ১ স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে ছিল। ৪ মেয়ের মধ্যে নুর জাহান বেগম, সোলতানা বেগম পিতার পূর্বে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে উক্ত নুরজাহান বেগম এর এক কন্যা ও সোলতানা বেগমের ১ ছেলে ৩ মেয়ে জীবিত ছিল। অতঃপর ১৯৭৪ সালে আবদুর রশীদ মৃত্যু বরণ করেন।

মুসলিম আইন অনুযায়ী পিতার আগে সন্তান মারা গেলে ঐ মৃত পুত্র বা মেয়ের সন্তানরা প্রথমোক্ত ব্যক্তির স্বত্বের উত্তরাধীকারী নহেন।

মুসলিম পারিবাারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ পাশ হওয়ার পর মুসলিম উত্তরাধিকারী আইনের আমূল পরিবর্তন ঘটে। এ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী পিতা/মাতার আগে কোন পুত্র বা কন্যা সন্তান মারা গেলে পিতা বা মাতার পূর্বে মৃত পুত্র/কন্যারা তাদের দাদা-দাদী/নানা নানী হতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার অর্জন করেন। যে পরিমান সম্পত্তি তারা তাদের পিতা মাতা জীবিত থাকিলে পাইত।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী নুর জাহান বেগম এবং নুর জাহান বেগমের কন্যা রেহেনা বেগম স্বত্বের মালিক হিসেবে নামজারী জমাভাগ মামলা নং-৬৬৫(ওঢ-ও) ২০১৯-২০২০ মূলে সহকারী কমিশনার ভূমি, চকরিয়া বিগত ১৩/০১/২০২০ ইংরেজী তারিখের আদেশ মূলে ১৩ শতক জমি নিয়ে ২৬১৭ নম্বর খতিয়ান সৃজন করেন। যাহার মূল বিএস খতিয়ান নম্বর ১৯২। কিন্তু আবদুর রশীদের ছেলে অর্থাৎ রেহেনো বেগমের মামা জাফর আলম বাদী হয়ে সৃজিত বিএস ২৬১৭ নম্বর খতিয়ানের বিরুদ্ধে ২৭ অক্টোবর ২০২০ সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেনের নিকট রিভিউ নামজারী মিচ ১৯/২০২০-২০২১ নম্বর মামলা দায়ের করেন।

কিন্তু উক্ত মামলা দায়ের করিবার পূর্বে আবদুর রশিদ এর পুত্র জাফর আলম ১৯৬১ সালের আইন অনুযায়ী রেহেনো বেগম কোন সম্পত্তি পাইবেনা মর্মে হাঁকাবাকা করিলে রেহেনো বেগম আইনী মতামত গ্রহণের জন্য দ্বারস্থ হন কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র আইনজীবি (জিপি) মোহাম্মদ ইছহাকের। আইনজীবি মোহাম্মদ ইছহাক পিতার আগে কোন ছেলে মেয়ে মারা গেলেও মারা যাওয়া ছেলে মেয়ে সন্তানরা আবদুর রশীদের স্বত্বের মালিক হবেন মর্মে বিগত ২১-১০-২০২০ ইংরেজী তারিখ একটি লিখিত আইনগত অভিমত প্রদান করেন।

তিনি তৎ মতামতে উল্লেখ করেন যে, যেহেতু আবদুর রশীদ অধ্যাদেশ পাশ হওয়ার পর অর্থ্যাৎ ১৯৭৪ সালে মৃত্যু বরণ করিয়াছেন, সেহেতু পারিবাকি অধ্যাদেশ ১৯৬১ সালে পাশ হওয়ার আগেও কোন সন্তান মারা যান, তাদের সন্তানরাও স্বত্বের মালিক হবেন।

তিনি তার প্রদত্ব মতামতে উল্লেখ করেন যে, মুসলিম আইনের বিধান মতে কোন ব্যক্তি মারা যাওযার আগে তার কোন ছেলে মেয়ে মারা গেলে মৃত ছেলে বা মেয়েরা প্রথমোক্ত ব্যক্তির স্বত্বের অধিকারী নহেন।

নামজারী রিভিও মিচ মামলা নম্বর ১৯/২০২০-২০২১ বিষয়ে আইনগত বিষয় জনার জন্য সহাকারী কমিশনার ভূমি) তানভীর হোসেন তার দপ্তর থেকে স্বারক নম্বর ৬১৭/২০২০, তারিখ ২৭/১০/২০২০ মূলে জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইছহাক এর নিকট আইনী পরামর্শের জন্য প্রেরণ করেন। জিপি কক্সবাজার বিগত ০৪/১১/২০২০ ইংরেজী তারিখে স্বারক নম্বর জিপি/কক্সবাজার/২০২০-৬৬ মূলে আইনগত মতামত প্রদান করেন।

কিন্তু জিপি মোহাম্মদ ইছহাক এবার মতামত দিলেন ঠিক উল্টো। তিনি তার মতামতে উল্লেখ করেন, রেহেনা বেগমের মাতা নুর জাহান তার পিতার আগেই মারা গেছেন। তাই তার সন্তানেরা প্রথমোক্ত ব্যক্তির স্বত্বের মালিক হবেন না। ঘটনার বিষয়বস্তু যেমন এক তেমনি ব্যক্তিও এক এবং আইনী মতামত প্রদানকারী ব্যক্তিও একই। কিন্ত আইনী মতামত প্রদান করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। এর ফলে বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

জিপির দুই ধরনের বক্তব্য বিষয়ে চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবি জনাব এডভোকেট এসএম হেফাজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিপির দুই ধরনের মতামত বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে বলেন যে, ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ এর ৪ ধারা একটি সুস্পষ্ট এবং প্রতিষ্টিত আইন। পিতা মাতার পূর্বে কোন পুত্র-কন্যা মৃত্যুবরণ করিলে এবং উক্ত মৃত পুত্র কন্যার কোন সন্তান জীবিত থাকিলে তাহারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাইবে যাহা তাহাদের পিতা মাতা জীবিত থাকিলে পাইত।

আলোচ্য বিষয় পর্যালোচনা করিয়া তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, আবদুর রশীদ অর্থ্যাৎ যাহার সম্পত্তি বন্টন হচ্ছে- তিনি ১৯৭৪ সনে মৃত্যু বরণ করিয়াছেন। অর্থ্যাৎ অধ্যাদেশ পাশ হওয়ার পর। বর্তমান অবস্থায় তৎ কন্যা সোলতানা বেগম ও নুর জাহান অধ্যাদেশ জারী হওয়ার আগে বা পরে মৃত্যু বরণ করিয়াছেন তাহা প্রাসঙ্গিক বিষয় নহে। তৎ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত (৪৪ ডিএলআর ২৭৬ এডি) সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।

ভুক্তভুগী রেহেনা বেগম জানান, একই বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের (জিপি) মোহাম্মদ ইছহাক এক মাসের ব্যবধানে লিখিত দুই ধরনের মতামতের কারণে আমরা হয়রানির শিকার। বিষয়টি সরকারের উর্ধবতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

কক্সবাজারের জিপি মোহাম্মদ ইসহাক কাছ থেকে এক মাসের ব্যবধানে দুই রকম মতামত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৬১সনের আইন পাসের পূর্বে ১৯৫৮ সালে নুর জাহান মারা যায়। সত্বের মালিক মৃত: নুর জাহানের বাবা আব্দুর রশিদ ১৯৭৪ সালে মারা যায়। আইন পাশের আগে উক্ত নুরজাহান মারা যাওয়ায় পিতার সত্বের সত্ববান হইবেন না।