তাওহীদুল ইসলাম নূরী

এক কালে দেশে মানুষ কম থাকতে জমি ছিল বেশী, উৎপাদন ছিল কম। খাদ্যের অভাবও ছিল তখন। আর আজ যখন দেশে মানুষ বেশী জমি কম, তখন উৎপাদন বেশী। তাই, স্বভাবতই, খাদ্যের অভার থাকার কথা নয়। কিন্ত জমি বেশী থাকতে যেখানে খাদ্যের অভাব ছিল আজ সেখানে জমি কম হওয়ার পরেও খাদ্যের এমন স্বয়ং সম্পূর্ণতা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে গিয়ে দেখা যায় অতীতে খাদ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত হত প্রাকৃতিক উপায়ে। কিন্ত, বর্তমানে হাইব্রিড, ক্যামিক্যাল এবং ফরমালিনের আশ্রয়ে খাদ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হচ্ছে। আর তাইতো আজকালকার খাদ্যগুলোতে আগের দিনের খাদ্যের মত স্বাদ এবং পুষ্টিগত গুণাগুণ পরিলক্ষিত হয় না।

খাদ্যের মধ্যে যে স্বাদ ও পুষ্টিগত গুণাগুণ থাকার কথা তা থাকবে কীভাবে? প্রযুক্তির আশ্রয়ে যেখানে ২০ দিনের মধ্যে একটি ফার্মের মুরগীর বাচ্চাকে ২-৩ কেজি করা সম্ভব হচ্ছে। কুল ড্রিংকস,কনডেন্সড মিল্ক বলে যেসব জুস আর তরল দুধ বাজারে পাওয়া যায় সেখানে নূন্যতম ঐসবের উপস্থিতি মিলে না। গোদামজাতের নাম দিয়ে এক মৌসুমের ফল ও তরকারীতে যখন ফরমালিন মিশিয়ে অন্য মৌসুমে বিক্রয় করা হয় তখন ঐ ফল ও তরকারি তার সঠিক গুণাগুণ হারায়৷ এসব তো খাদ্যের আজকালকার অবস্থার কথা।

আবার, হাইব্রিড, ক্যামিকাল এবং ফরমালিনের আশ্রয়ে খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পরও দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার পায় না এবং ২০০ কোটি লোক প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খায়। যার বেশীর ভাগই অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে, আমাদের অধিকাংশের খাদ্যাভ্যাসও সঠিক নয়। বিশ্বজুড়ে মানুষের এই খাদ্যাভ্যাসকে বিশৃঙ্খল উল্লেখ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর ফলে অচিরেই মানবসভ্যতা ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে বলে সম্প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে যে দিনের শুরুতে যেন অন্য সময়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী আহার করে। কিন্ত, আমরা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এক কাপ চা আর দুইটি বিস্কুটকেই দিনের শুরুর খাদ্য হিসেবে ধরে নিয়েছি।

চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক বিশেষ সাময়িকী ‘ দ্য ল্যানসেট ‘ সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিপর্যয় এড়াতে এখন থেকেই বাদামজাতীয় ফল, বিভিন্ন রকমের ফলফলারি, শাকসবজি, শিম ও মটরজাতীয় ডাল খাওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ করে গরুর গোশত ও শর্করা গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বলেছেন। খাবারের এই যে ছক, সেটা অনুসরণ না করে ইচ্ছেমত খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরে নানা ধরণের রোগের জন্ম হচ্ছে। অন্যদিকে রোগ থেকে পরিত্রানের জন্য যেসব ফল ও তরকারি খাওয়া দরকার তাও হাইব্রিড, ক্যামিক্যাল ও ফরমালিনের বলি হওয়ায় সহজে রোগমুক্তি মিলছে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করলে প্রতি বছর বিশ্বে ১ কোটি ১৬ লাখ অর্থাৎ ২৩.৬% অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব।

খাদ্যাভাস আমরা নিজেরা একটু সচেতন হয়ে পরিবর্তন করতে পারলেও, খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের বর্তমান প্রক্রিয়া রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই,সরকার,খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে সঠিক এবং নির্ভেজালভাবে খাদ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এগুতে হবে। আর, আমাদেরকেও খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাসে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।