সিবিএন ডেস্ক:
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির সরকারের প্রধান ইমরান খানের পদত্যাগ দাবি করছে বিরোধীদলগুলো। তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির প্রধান প্রধান প্রদেশ ও শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিলে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) গঠন করে। ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে দেশটির বামপন্থী, ডানপন্থীসহ উদার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো অভূতপূর্ব এই ঐক্য গড়ে তোলে। গত ১৬ অক্টোবর থেকে এই জোট একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করছে।

১৬ই অক্টোবর থেকে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) একের পর এক বিক্ষোভ আয়োজন করেছে। দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় দল থেকে শুরু করে কিছুটা বামপন্থী চিন্তাধারার দল, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যরাও এই দলের সাথে যুক্ত। দেশটির চারটি রাজ্যের তিনটিতেই – পাঞ্জাব, সিন্ধ ও বালোচিস্তান – বড় ধরণের র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাইবার পাখতুনওয়ালা রাজ্যে রবিবার প্রথমবারের মত সরকার বিরোধী র‍্যালি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, তারা ‘জনগণের প্রতিনিধিত্ব না করা’ এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা এবং অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তুলেছে তারা।

এর মধ্যে দেশটির প্রাক্তন ও বর্তমানে নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জামাতা সাফদার আওয়ানকে সেনাবাহিনী ও সরকার মিলে গ্রেফতার ও হেনস্থা করার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা অভিযোগ করে, ইমরান খান একটি পুতুল সরকারের প্রধান। নওয়াজ শরীফ লন্ডন থেকে প্রচারিত তার বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এই সরকারকে পেছন থেকে কারা চালাচ্ছে তা সবাই জানে। এছাড়া ইমরান খান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সব বিরোধীদলগুলোই অভিযোগ করে আসছে, সেনাবাহিনীর মদদেই ক্ষমতায় এসছেন ইমরান খান। সাফদার আওয়ানকে গ্রেফতারের পর সেনাবাহিনী বেশ বিব্রত হয়েছিল।

তবে দেশটির সেনাবাহনী বরাবরের মতো ইমরান খানের সরকারকে মদদ দানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি এমন অনাস্থায় শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী কি ভূমিকা নেয়, সেটিই দেখার বিষয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি চলমান বিক্ষোভের কী পরিণতি হবে তা কেউই ধারণা করতে পারছে না। কিন্তু সবাই জানে যে দ্বন্দ্বটা রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তার বিরোধীরা খুবই কম প্রভাবশালী হিসেবে মনে করেন।

বিরোধী বিক্ষোভগুলো শুধু ইমরান খানের বৈধতারই প্রশ্ন তোলেননি, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। শেষবার ২০০৮ সালে জনরোষের মুখে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।