নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত সংকট থেকে ধরিত্রীকে বাঁচাতে একটি আশু ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে এ শতাব্দীর শেষের দিকে তাপমাত্রা ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি বাড়তে পারে এবং তাৎক্ষণিক প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পৃথিবী বেঁচে থাকার পক্ষে পুরোপুরি অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে।’

প্রধানমন্ত্রী ইউএনএফসিসিসি রেস টু জিরো ডায়ালগের একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেলে ‘নেট-জিরো লক্ষ্য পূরণে রূপান্তরকালীন নেতৃত্ব’ শীর্ষক সমাপ্তি অধিবেশন পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘কেবল বিশ্বব্যাপী সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই আমরা আসন্ন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি এবং এ গ্রহকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নেয়ার সময় আগামীকাল নয়, আজ।’

তিনি বলেন, ‘জীবন ও মূল্যবান সম্পদ বাঁচাতে বিশ্ব নেতৃত্বকে অবশ্যই কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা যদি আমাদের গ্রহ ও নিজেদের বাঁচাতে চাই, তবে সকল সরকারকে যথাসাধ্য উচ্চাভিলাষ বাড়াতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিচের ১০০টি দেশ মাত্র ৩.৫ শতাংশ বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন করে যেখানে জি-২০ দেশগুলো তিন চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। সুতরাং আমরা এ দেশগুলোর নেতৃত্বের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ আশা করি। মা ধরিত্রীর সাথে আমাদের সম্প্রীতি রক্ষায় ‘জলবায়ু সহসশীলতা দিবস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক দিবসের নামকরণ করারও আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে সহায়তার জন্য আমরা প্রতিবছর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আহ্বান জানাই।’ তিনি সংশ্লিষ্ট বিশ্বনেতৃত্বের প্রতি রেয়াতি অর্থায়ন, ঋণ মওকুফ এবং সকলের প্রযুক্তিতে অ্যাক্সেসের নিশ্চয়তা দেয়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী মত দেন যে, প্যারিসচুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই একমাত্র উপায় এবং ‘লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির’ বিষয়টি অবশ্যই মূলধারাভুক্ত করতে হবে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উচিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে উঠতে না দেয়া। তিনি অবশ্য বলেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রাক-শিল্পস্তরের ওপরে প্রায় এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‌‌‘এ বছর বাংলাদেশ দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি বারবার বন্যার কবলে পড়েছে, যা ফসল ও আবাসস্থলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে মানুষের জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণেই ঘটছে, যা প্রকৃতিতে পরিবর্তন আনছে। জলবায়ু পরিবর্তন সকলের কাছে এক চূড়ান্ত বাস্তবতা, তবে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু অরক্ষিত দেশগুলোর জন্য এটি আরও প্রকট।’

প্রধানমন্ত্রী মত দেন যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের এমনকি আর আধ-মিটার বৃদ্ধি অনেক জলবায়ু অরক্ষিত দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী উচ্চঝুঁকি বিবেচনা করে আমাদের জাতীয় সংসদ একটি ‘প্ল্যানেটারি ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করেছে এবং বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুদ্ধ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা বিশ্বনেতৃত্বের বাকি অংশ থেকেও একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করি।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো ৪৮ সদস্যের জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হয়ে আমরা সম্মানিত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত মাসে সিভিএফের পক্ষে আমি প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক নেতার প্রতি তাদের এনডিসিকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত নাগাদ বাড়ানোর আহ্বান জানাতে ‘মিডনাইট সার্ভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট চালু করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এ বছর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে, যিনি অনেক আগেই আমাদের জনগণের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকির বিষয়টি চিহ্নিত করে গেছেন। এসব হুমকি কাটিয়ে উঠতে এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বছরে আমরা আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় একটি নতুন পথরেখা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্পদ সংস্থানে সহায়তায় একটি জাতীয় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করতে একটি কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’