মো: কাউছার উদ্দিন শরীফ :

ঈদগাঁও বাস স্টেশনের উপরে মহাসড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহন থামানোর ও যাত্রী উঠানামা সহ গাড়ী পার্কিংয়ের ফলে যান চলাচল সহ জনসাধারণের নানা ভোগান্তির শেষ নেই। এসব কিছু প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। ফলে নিত্যদিনের যানজটের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না ঈদগাঁওবাসীর।

জানা যায়,চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁঁও বাসস্ট্যান্ডস্থ আরকান সড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ জনবল সংকট  চরমে ।    ৩ জন জন পুলিশ নিয়ে চলছে ঈদগাঁঁও ট্রাফিক পুলিশের অস্থায়ী ফাঁড়ির কার্যক্রম। সেখানেও নিয়মিত ডিউটি করে না টিআই। ফলে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে শৃঙ্খলা ফিরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস-স্টেশনে কয়েক ধরনের লোকাল গাড়ির অফিস দেখা যায়। প্রত্যেক গাড়ি দাড় করানো হয় বাস-স্টেশনে। দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানামা করা হয় এসব গাড়িতে। এসময় বিশ্ব রোডের ফুটপাতসহ মূল সড়কের অধিকাংশ দখল করে নেই এইসব গাড়ি। ফলে দূরপাল্লার গাড়ি এ অংশে এসে উভয় পাশ থেকে ক্রসিং করতে না পেরে লেগে যায় যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হতে। অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা না গেলে যানজট নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

প্রয়োজনের চেয়ে ছোট এই বাস-স্টেশনে যেসব গাড়ির অফিস রয়েছে, মাইক্রোবাস, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, টমটম, বারো আওলিয়া সার্ভিস, আলিরাজ পরিবহন, ঈদগাও লাইন, সী-লাইন, অটো রিকসা, ডাম্পার, ছাড়পোকা, হিল লাইনসহ দুর পাল্লার ও স্বল্প দুরত্বের ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহনের অবৈধ কাউন্টার ও অস্থায়ী পার্কিং স্টেশন। এসব গাড়ি নিদৃষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বিশ্বরোডের ফুটপাত ও মূল রাস্তা দখল করেই চলেছে গাড়ি গুলোর কার্যক্রম। হাইওয়ে সড়কে চলাচলের নিয়ম না থাকলেও চলছে টমটম ও অটো রিকসা। ফলে যানজট তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে।এদিকে এইসব গাড়ির অধিকাংশ চালক অনভিজ্ঞ ও লাইসন্স বিহীন বলেও নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। ড্রাইভারেরা হাইওয়ে সড়কের নিয়মনীতি না জানার কারণে এক্সিডেন্টসহ যানজট বাড়ছে বলে ধারনা অনেকের। এছাড়া স্টেশন কেন্দ্রিক মহাসড়কের দুই পাশে দোকানের সামনে ঝুপড়ি দিয়ে সড়ক দখল করে দোকান বের করার কারণেও যানজট বেড়ে চলছে। পথচারীদের মতে সড়কের ফুটপাত দখল করে দোকান বসায় ফুটপাত খুজে পাওয়া মুশকিল, ফলে ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্টানগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের।

অন্যদিকে স্টেশন কেন্দ্রিক গড়ে উঠা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ভিশন শো রুম ও কেজি স্কুল গেইটে গড়ে উঠা মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ইলেক্ট্রনিক্স শো রুমের সিড়ি সরাসরি রাস্তার উপর নির্মাণ করায় শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। এছাড়া সব মার্কেটের সামনে ঝুপড়ি দিয়ে সড়কের উপর ভাসমান দোকান ভাড়া দেয়ায় স্টেশন জুড়েই নিত্য যানজট।
এসব গাড়ির অফিস থেকে মাসিক মাসোহারা নেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও সুত্রে জানা গেছে।
আবার স্টেশন সংলগ্ন যাত্রী ছাউনির সামনে যানজট নিরসনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক পুলিশ সদস্যের দেখা মিললেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঈদগাঁও বাস-স্টেশনে চাহিদার চেয়ে কমসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ হওয়ার কারণে যানজট সামলানো যাচ্ছে না বলেও জানা গেছে।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০০২ সালের দিকে সাবেক এক এমপির বিশেষ অনুরোধে দৈনিক ৫/৭টি করে গোমাতলী সিএনজি দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সেটি আজ প্রকাশ্য সিএনজি স্টেশনে রূপ নিয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এবং অনুমোদনবিহীন তিনচাকার গাড়ী মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় যানজটের নাকালে অতিষ্ট সর্বশ্রনী পেশার মানুষ।

হারুন নামের এক যুবক জানান, এ বাস স্টেশন দেখে বুঝার উপায় নেই, এটি ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। হাঁটার জায়গাজুড়ে পণ্যসামগ্রীর পসরা আর হকারদের ব্যস্ততা। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং আর হকারদের ব্যবসা।

প্রতিবেদন কারী দেখিলে শফিকুর রহমান নামের আরেক যুবক বলেন, এই স্টেশনের জাপান মার্কেটের সামনের ফুটপাতে চনামুড়ির দোকান নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা। সেখানে এলোমেলো পড়ে আছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। সেইফ ইসলামিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাত শীতের পোশাকের দখলে। তার মধ্যেই লোকজন চলাচল করছে খুব কষ্ট করে। একদম গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। পাশাপাশি দুজনের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। ঠেলাঠেলি করে হাঁটতে হয়। দরগাহ গেইট দক্ষিণ পাশে ফুটপাতে বসেছে চনামুড়ির দোকান। নিউরন হাসপাতালের পশ্চিম পাশে ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তৈলের ড্রাম। এভাবে স্টেশনের অধিকাংশ ফুটপাত চলে গেছে হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে।

ঈদগাঁওতে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের টিআই পলাশ বলেন, আমাদের দুই জন জনবল আছে তার মাঝে এক জন ছুটিতে রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে শত চেষ্টার পরেও যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। যা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। তাছাড়াও স্থানীয় বাস কাউন্টার ও গাড়ি পার্কিং বিষয়ে সমস্যা রয়েছে যা সামাধানের চেষ্টা চলছে।