চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :

চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন, রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব (২৫), রূপালী ওরফে রূপা ওরফে নিপা (২০) ও আলাউদ্দিন (৫০)।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টায় নগরের কে বি আব্দুস সাত্তার সড়কে হুমায়ুন মোর্শেদের বাড়ির সামনে অরবিন্দু দত্ত (৩৪) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করে তারা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় ষ্টেশনরোড এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইলসহ আলাউদ্দিনকে (৫০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন দুইজন পুরুষ ও এক নারীর কাছ থেকে কিনেছেন। আলাউদ্দিন আরও জানায়, আসামিরা প্রায় সময় নগরের ষ্টেশনরোড এলাকায় রাত ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে চোরাই মোবাইল বিক্রির জন্য আসে।

ওসি মহসীন বলেন, এ তথ্য জানার পর ওই সময় অভিযান চালিয়ে রাকিবুল হাসান প্রকাশ রাকিব ও রূপালী প্রকাশ রূপা প্রকাশ নিপাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাকিবের কাছ থেকে ১টি টিপছোরা ও ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, গত ১৬ নভেম্বর মাগরিবের পর নিপা রাকিব ও রাশেদকে ফোন দিয়ে দেওয়ানবাজার মোড়ে আসতে বলে। রাশেদের সাথে জোবায়েদকেও নিয়ে আসতে বলে নিপা। নিপা ও রাশেদ দেওয়ানবাজার মোড়ে একত্রিত হয়। জোবায়েদের জন্য তারা আধাঘন্টা অপেক্ষা করেও সে না আসায় তারা তিনজনই একঘন্টা ঘুরাঘুরি করবে বলে তিনশত টাকা দিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে। রাকিব ও নিপা সিএনজির পিছনে বসে এবং রাশেদ সিএনজির সামনে বসে। সিএনজি নিয়া তারা ছিনতাই করার জন্য চকবাজার হয়ে ঘুরে গনি বেকারী হয়ে জামালখান মোড়ে এসে একটি ছেলেকে একা দেখতে পায়।

রাকিব ও নিপা সিএনজি থেকে নামে এবং রাশেদ সিএনজি ড্রাইভারকে টিপ ছোরার ভয় দেখিয়ে সিএনজি স্ট্রাটে রাখে। রাকিব ওই ছেলেটিকে টিপছোরার ভয় দেখিয়ে ১টি সিম্পনি মোবাইল ফোন সেট তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। মোবাইলটি নিয়ে পুরাতন স্টেশনে গিয়ে বিক্রয় করে। পুনরায় তারা ছিনতাই করার জন্য আরেকটি সিএনজি এক ঘন্টার জন্য ২০০ টাকায় ঘোরাঘুরি কথার বলে ভাড়া নেয়। রাকিব ও নিপা সিএনজি নিয়ে আন্দরকিল্লা মোড় হয়ে রহমতগঞ্জ, জেএমসেন হল রোড দিয়ে গনি বেকারী মোড়ের দিকে যায়। তখন সন্ধ্যা অনুমান সাতটা হতে সাড়ে সাতটা।

এসময় সেখানে একটি ছেলেকে কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল টিপতে টিপতে যাওয়ার সময় নিপা দেখে রাকিবকে বলে যে, ছেলেটাকে ‘কাজ’ করবে কিনা। তখন ছেলেটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়ায়। রাশেদ সিএনজির ড্রাইভারকে টিপছোরার ভয় দেখিয়ে সিএনজি চালু রাখে।

রাকিব ও নিপা সিএনজি থেকে নেমে ছেলেটির কাছে গিয়ে তাকে টিপছোরার ভয় দেখিয়ে তাহার হাতে থাকা এমআই মোবাইল সেটটি নিয়ে নিলে ছেলেটি চিৎকার দেয়। রাকিব টিপছোরা দিয়ে উপর্যুপরি ছেলেটির হাতে ও পেটে আঘাত করে। ছেলেটি মাটিতে শুয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজন ও রাস্তায় থাকা গাড়ি দাঁড়ালে রাকিব ও নিপা দৌড়ে সিএনজিতে উঠে যায়। সিএনজি ড্রাইভার যেতে না চাইলে রাশেদ সিএনজি ড্রাইভারকে টিপছোরার ভয় দেখায় ও ঘুষি মারতে থাকে। এরপর তারা পুরাতন রেলস্টেশনে মোবাইলটি বিক্রয় করে দেয়।

এরপর পুনরায় ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে গত মঙ্গলবার মাগরিবের আযানের পর রাকিব, নিপা ও রাশেদ দিদার মার্কেটে জড়ো হয়। তারা হেঁটে প্যারেড মাঠ কর্ণারে এসে ঘোরাঘুরির কথা বলে ২৫০ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া নেয়। গনি বেকারীর মোড়ে গিয়ে একটি ছেলেকে টিপছোরার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পুনরায় সিএনজি নিয়ে চকবাজার থানাধীন সিজিএস স্কুলের দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে সার্সন রোড সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনের সামনে রাত অনুমান ৮টার দিকে এক ছেলেকে মোবাইল হাতে নিয়ে যেতে দেখে ওই ছেলেটিকে টিপছোরার ভয় দেখিয়ে তার মোবাইল নিতে চাইলে সে মোবাইল দিতে না চাওয়ায় রাকিব তাকে টিপছোরা দিয়ে উপুর্যপুরি আঘাত করে তার মোবাইলটি নিয়ে নেয়। তারা ছিনতাই কাজ শেষে পুনরায় পুরাতন স্টেশনে বিক্রি করতে গেলে পুলিশ রাকিব ও নিপাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় রাশেদ সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, ধৃত রাকিব ও নিপা পরস্পর যোগসাজশে নিজ হেফাজতে টিপছোরা রাখার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে এসআই ধর্মেন্দু দাশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন।