ইমাম খাইর, সিবিএনঃ

পোস্ট মাস্টারের অবহেলায় নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া হলোনা শওকত আলমের। ১৪ দিন পরে হাতে পেলেন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের চিঠি।

কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ধর্মের ছরার জাফরের আলমের ছেলে শওকত আলম টেকনাফ পৌরসভার ‘সহকারী কর আদায়কারী’ পদে আবেদন করেছিলেন। প্রার্থীত পদের লিখিত পরীক্ষা ছিল ১৪ নভেম্বর, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা। ওই দিন টেকনাফ উপজেলা আদর্শ কেজি স্কুলের স্কুল হল রুমে লিখিত পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করতে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র ও কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার আহবায়ক হাজি মোহাম্মদ ইসলামের সাক্ষরে, ১০২৮ নং স্মারকে ২৬ অক্টোবর চিঠি ইস্যু করা হয়। ওই চিঠিতে শওকত আলমের রোল নম্বর লেখা হয় ২১৮।
শওকত আলমের নামে ইস্যুকৃত চিঠিটি ১ নভেম্বর ইসলামপুর পোস্ট মাস্টার ডাঃ রফিকুল ইসলাম ইদগাহ পোস্ট অফিস থেকে বুঝে নেন। কিন্তু আবেদনকারী শওকত আলম ওই চিঠি পান পরীক্ষার দিন তথা ১৪ নভেম্বর বিকালে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শওকত আলম।
তিনি লিখেছেন- ইসলামপুর বাজার পোস্ট অফিস অনিয়মের এক আতুড় ঘর। পোস্ট অফিসের প্রধান ডাঃ রফিক একজন খুব ভাল মানুষ হিসেবে সবাই জানেন এবং সবার কাছে একজন গ্রহনযোগ্য মানুষ। কিন্তু পোস্ট অফিসের কাজে কোন ভালমানুষি পরিচয় দিতে পারলেন না। কোন কাজ নাই। কিন্তু পোস্ট অফিসে জনবল আছে তিনজন। লোকবল বলতে সবাই ওনাদের পারিবারিক। বলতে গেলে এটি একটি পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন অফিস আদালত থেকে কোন চিঠি আসলে ওনারে এইটাকে  দায়িত্ব মনে করে না।
কিন্তু ঠিকই মাসের বেতন মাসে নিতে ভুল করেন না। কিরে ভাই, দায়িত্ব না পারলে ছেড়ে দেন। মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করার দায়িত্বে তো সরকার আপনাদের দেয় নাই।
শওকত আলম দুঃখভরে লিখেন- আমার ট্যাক্সের টাকায় আপনার বেতন হয়। আর আপনি সামান্য চিঠি বিলি করতে পারেন না।
ঈদগাহ  পোস্ট অফিস থেকে একটা চিঠি ওনি গ্রহন করে ০১/১১/২০ তারিখে। কিন্তু ওনি বিলি করতে যায় ১৪/১১/২০ তারিখ। এই ১৪ দিনে ওনি সামান্য চিঠি বিলি করার সময় পান নাই? ততদিনে চিঠির মেয়াদ শেষ।
বাবু মশাই সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ার মহাব্যস্ত। বিচার কাকে দিব? বিচারের আশায়ও লিখি নাই। মনের দুঃখ কিছুটা হলে কমানোর জন্য লিখলাম।
আল্লাহ মাবুদ বলতে পারবেন ডাঃ রফিক সাহেব আরো কতজনের গুরুত্বপূর্ণ চিঠি নিয়ে এমন কাজ করেছেন!
নিজের ব্যবসার কাজ ঠিকই মন দিয়ে করে। এলাকায় সুশীল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নিজেই ডিজিটাল ডাকঘরের নামে আসা ল্যাপটপ মেরে দিতে অসুশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি ওনাকে পারিবারিকভাবে খুবই সম্মান করি। তবে আমি মনগড়া আরো অনেক কিছু লিখতে পারলাম। কিন্তু লিখি নাই। যা লিখছি যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নিয়ে লিখেছি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে শওকত আলম বলেন, পোস্ট মাস্টার ডা. রফিকের কারণে এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি সরকারী দায়িত্বকে দায়িত্বই মনে করেন না। থাকেন অন্য ধান্দায়।
বিলিকারক ফয়সাল ও বিয়ারার শাহজাহান নামের আরো দুইজন থাকলেও তারা নামেমাত্র। তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেয় না। নিজেও করে না। যে কারণে মানুষ সরকারী সেবা বঞ্চিত।
ডিজিটাল ডাকঘরের জন্য সরকারের বরাদ্দ ল্যাপটপ, প্রিন্টার, রাউটারের কোন ব্যবহার নেই। এমনটি ডাকঘরে এই রকম কোন সরঞ্জামের অস্তিত্ব নেই।
বছরখানেক আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘হিসার রক্ষক’ পদে আবেদন করেছিলেন শওকত আলম। সেবারের চিঠি নিয়ও একই ঘটনা ঘটায় পোস্ট মাস্টার রফিক। -অভিযোগ শওকত আলমের।
পোস্ট মাস্টার ডাঃ রফিকুল ইসলাম নিজের কাজ নিজে করেন না। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের টাকাও জমা নেন না। অপরজন দিয়ে কাজ করাতে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে বলে স্থানীরা মনে করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোস্ট মাস্টার ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, চিঠিটি ১০ নভেম্বর তিনি গ্রহণ করেন। পরের দিন শুক্রবার, শনিবার পড়ায় বিলি করতে পারেন নি।
ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখা গেল, ১০ নভেম্বর ছিল মঙ্গলবার। পরের দুই দিন সরকারী টাইম বুধবার, বৃহস্পতিবার অফিস খোলা ছিল। নিজের দোষ ঢাকতে সেখানেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন পোস্ট মাস্টার ডাঃ রফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে রবিবার দুপুরে জেলা পোস্ট অফিসের ইন্সপেক্টর মোঃ আবদুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ১১ নভেম্বর টেকনাফ থেকে চিঠি পোস্টিং করা হয়েছে। প্রাপকের ঠিকানা ‘নাপিতখালি বটতলী’ লেখা থাকাতে চিঠিটি ঈদগাঁও ফেরত যায়। সেখান থেকে আবার ৯ নভেম্বর ইসলামপুর পাঠানো হয়। তবুও হাতে যে সময় ছিল সে সময়ের মধ্যেই প্রাপকের কাছে পৌঁছানো যেত।
দায়িত্ব অবহেলার জন্য পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ইন্সপেক্টর আবদুর রহিম।