মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় থেকে পূর্বে হাশেমিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রধান সড়ক উন্নয়নের ডিজাইন, প্ল্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৃহস্পতিবার ১২নভেম্বর বৈঠক হবে। সে বৈঠকের পর জানা যাবে, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক সুনির্দিষ্টভাবে কত ফুট প্রস্থে উন্নয়ন করা হবে।

বুধবার ১১ নভেম্বর বিকেলে কক্সাবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ এর সাথে প্রধান সড়ক উন্নয়ন নিয়ে “কক্সবাজার উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ” এর একটি প্রতিনিধি দল তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি একথা বলেন।

কক্সাবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ আরো বলেন, ডিজাইন, প্ল্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিভাবে পুরো প্রধান সড়কটি ৫০ ফুট প্রস্থ ধরে কেন ডিজাইন করেছে-তা তাঁর বোধগম্য হচ্ছেনা। কারণ বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) এর মৌজা ম্যাপ মতে, পরিমাপ করে বতর্মান প্রধান সড়কের সব জায়গায় রাস্তার প্রস্থ ৫০ ফুট পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় কিভাবে প্রধান সড়ক ৫০ ফুট প্রস্থ ধরে ডিজাইন করা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ডিজাইন প্ল্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তাদের ব্যাখার উপর ভিত্তি করেই আলোচনা করার জন্য প্রধান সড়কের সংশ্লিষ্ট এলাকার উভয়পার্শ্বের জমি, ভবনের মালিকদের সাথে কউক এর উদ্যোগে আগামী ১৫ নভেম্বর রোববার আবার বৈঠক করা হবে। কউক চেয়ারম্যান বলেন, ডিজাইন-প্ল্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত শুধু প্রধান সড়ক ডিজাইন, প্ল্যান করে দেওয়ার খরচ বাবদ ৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে।

কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ বলেন, প্রধান সড়কের সংশ্লিষ্ট এলাকার উভয়পার্শ্বের জমি, ভবনের মালিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আপাতত প্রাথমিকভাবে ৪২ ফুট প্রস্থ ধরে প্রধান সড়ক উন্নয়নের চিন্তা করা হলেও বিএস মৌজা ম্যাপ মতে জায়গা না থাকলে তা আরো কমিয়ে প্রয়োজনে ৪০ ফুট প্রস্থ ধরে উন্নয়ন কাজ করা হবে। প্রধান সড়কের যেসব স্থানে ৪০ ফুটের কম জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গায় প্রধান সড়কের সংশ্লিষ্ট এলাকার উভয়পার্শ্বের জমি, ভবনের মালিকদের ডেকে তাঁদের সাথে ফলপ্রসু আলাপ করেই সেসব জায়গায় উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এসময় “কক্সবাজার উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ” এর প্রতিনিধিদল কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদকে বলেন, বিএস মৌজা ম্যাপ মতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক যতটুকু জায়গা আছে তার প্রায় ৯৯% ভাগের বেশি উম্মুক্ত রয়েছে। যা কক্সাবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রধান সড়কের সংশ্লিষ্ট এলাকার উভয়পার্শ্বের জমি, ভবনের মালিকদের ত্রিপক্ষীয় যৌথ পরিমাপে প্রমানিত হয়েছে। যে ১% ভাগের কম জমি যাদের দখলে রয়েছে, সেসব ১% জমিও ফুটপাত, কার্নিস বা ভবনের বহিরাংশ। তারপরও দখলদারদের সেই ১% জায়গাও প্রতিনিধিদল নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে উন্নত ও বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন প্রধান সড়ক নির্মাণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ত্রিপক্ষীয় সমন্বিত পরিমাপ অনুযায়ী প্রধান সড়কের এক ইঞ্চি জায়গাও কারো দখলে থাকলে তা সকলে স্বেচ্ছায় দ্রুত ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বলে প্রতিনিধিদল কউক চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। “কক্সবাজার উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ” এর প্রতিনিধিদল বিএস মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী পরিমাপের বাইরে কারো কোন ব্যক্তিগত জোতের জমি উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হলে তা আলোচনা করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জমির মালিককে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিয়ে নেওয়ার জন্য কউক চেয়ারম্যান এর প্রতি অনুরোধ জানান। প্রতিনিধিদল উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়নে কউক-কে বার বার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমদ দঢ়তার সাথে বলেন, গত ৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় কক্সবাজারবাসীর সাথে মিশে গেছি, এককার হয়ে গেছি। তাই কক্সবাজারবাসীর কারো ক্ষতি হয়, এমন কাজ তাঁকে দিকে কাখনো হবেনা বলে তিনি “কক্সবাজার উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ” এর প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দেন। কউক চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ‘স্যার’ হিসাবে নন, কক্সবাজারবাসী সবার কাছে ‘ভাই’ থাকতে চান। প্রধান সড়ক উন্নয়ন কাজের প্রকল্প পরিচালক লে: কর্নেল আনোয়ার কোভিড পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় সাময়িকভাবে কউক সচিব আবু জাফর রাশেদ (উপসচিব) কে ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে কক্সাবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ প্রতিনিধিদলকে জানান।

সাক্ষাতকালে কউক চেয়ারম্যান এর সাথে অন্যান্যের মধ্যে কউক সচিব আবু জাফর রাশেদ (উপসচিব), অথরাইজড অফিসার রিশাদ উন নবী, সহকারী প্রকৌশলী ওয়াসিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, কক্সবাজার শহরের বার্মিজ প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন ব্রীজ থেকে পশ্চিমে লালদীঘির পূর্ব পাড় পর্যন্ত “কক্সবাজার উন্নত প্রধান সড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ” এর প্রতিনিধি দলে প্রধান সড়কের সংশ্লিষ্ট এলাকার উভয়পার্শ্বের জমি ও ভবনের মালিকদের মধ্যে বাজারঘাটা এস আলী মার্কেটের মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সেলিম নেওয়াজ, সৈকত টাওয়ারের মালিক ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, রক্ষিত মার্কেটের মালিক এডভোকেট তাপস রক্ষিত, বাজারঘাটা ডা. আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স এর মালিক ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুরুল আলম, এম. আলী মার্কেটের মালিক রাশেদ মোহাম্মদ আলী, রশিদ কমপ্লেক্সের মালিক গোলাম মওলা, জ্বিলানী মার্কেটের মালিক এডভোকেট আবদুর রহমান, ডাচবাংলা ফার্স্ট ট্রেকের মালিক দয়াল পাল, কাসেম প্লাজার মালিক আবুল কাসেম, কক্সবাজার বিল্ডার্স ভবনের মালিক জিয়াউল হুদা, ওয়ার্ল্ডটন ভবনের মালিক এফাজ উল্লাহ, ইসলামিয়া ম্যানশনের মালিক ইউসুফ নওয়াব শাহ, স্টান্ডার্ট ব্যাংক ভবনের মালিক ইয়াসিন পারভেজ চৌধুরী, কোরালরিফ (পূর্ব অংশ) ভবনের মালিক নুরুল কবির চৌধুরী, বিপাশা হোটেল মার্কেটের মালিক মনির আহমদ, বেঙ্গল ট্রেডার্স ভবনের মালিক মাহমুদুল হক, আল হাফেজ কমপ্লেক্সের মালিক হাজী আবদুশ শুক্কুর, মোহাম্মদ চেয়ারম্যান ভবনের মালিক এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, চৌরঙ্গী ও পার্শ্ববর্তী ভবনের মালিক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আল নিজাম হোটেলের মালিক মাওলানা আমিনুল হক, খাজা ইলেকট্রিক ভবনের মালিক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সাবেক খাওয়া দাওয়া হোটেল ভবনের মালিক শহিদুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।