এম.আর মাহমুদ


সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার শেষ রক্ষা হল না। এ ফাঁড়িতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এস.আই আকবর নিরীহ অনেক মানুষকে নানা কায়দায় আটকিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে টাকা আদায় করেছে। এভাবে মাত্র ১০ হাজার টাকা আদায়ের জন্য রায়হান আহমদ নামক এক যুবককে আটকিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে সারারাত নির্যাতন করেন। পরে রায়হান মারা যায়। তখন পুলিশ দাবী করেন, রায়হান ছিনতাইকারী। পাবলিক তাকে আটক করে গণপিঠুনি দিয়েছে। সে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এভাবে ধামা চাপা দিতে চেয়েছিল ওই ফাঁড়ির পুলিশ এস.আই আকবর হোসেন। কিন্তু বিধিবাম তা হল না। প্রকৃত রহস্য গোপন থাকল না। রায়হান মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী ফাঁড়িতে নিয়োজিত পুলিশের নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের পর রায়হান হত্যার রহস্য বের হতে শুরু হল। রায়হানের স্ত্রী দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফাঁড়ির বেশ ক’জনকে আটক করেছে। কিন্তু মূল হোতা আকবর হোসেন ভূঁইয়া ছিলেন পলাতক। রায়হানের পরিবার ও স্থানীয় সব শ্রেণির মানুষ অভিযুক্ত আকবরের গ্রেফতারের দাবীতে ছিলেন সোচ্চার। পুরো সিলেট শহর ছিল উত্তপ্ত। এক পর্যায়ে পুলিশ দাবী করেছিল আকবর হোসেন ভূঁইয়া কৌশলে ভারত পালিয়ে গেছে। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৯ নভেম্বর সকালে কানাই ঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন আকবরকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ্দ করেছে। একটি কথা না বললে হয় না, কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বাহার ছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর সারাদেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বন্দুক যুদ্ধ কার্যতঃ বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্যই এরই মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে ২ জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। মেজর সিনহা হত্যা কান্ডের পর টেকনাফ থানার মহা প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকলেই এখন কারাবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এ মামলাটি তদন্ত করছে কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। হয়ত অল্প দিনের মধ্যে সিনহা হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করবে। এ ঘটনার পর পুরো জেলার পুলিশের প্রায় ১৫০০ সদস্য একযোগে বদলী হয়েছে। ওইসব পুলিশ দেশের বিভিন্ন থানায় যোগদান করেছে। অথচ এ ঘটনায় সব পুলিশ জড়িত ছিল না। জড়িত ছিল হাতেগোনা কয়েকজন পুলিশ। তারপরও জেলার সব পুলিশকেই অপবাদের বোঝা নিয়ে কক্সবাজার থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। অপরদিকে ছিলেন মহানগরীর বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই আকবরের কৃতকর্মের দায় সিলেট মহানগর পুলিশকে নিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে মহানগর পুলিশের প্রধানকে সরিয়ে দিয়েছে। নতুন একজন পুলিশ কর্মকর্তা যোগদান করেছে। সিলেট পুলিশের ভাগ্য এখনও ভাল তাদের কপালে কক্সবাজার পুলিশের অবস্থা হয়নি। তবে হবে না এমন কথাও বলা যায় না। যে পুলিশ দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিবেদিত দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দূর্যোগকালীন সময় পুলিশের মানবিকতা মানুষ দেখেছে। অথচ কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার কারণে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত একটি বাহিনী বার বার হোঁচট খাচ্ছে। যা পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য বড়ই ক্ষতিকর। আসল কথা হচ্ছে এক সময় সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের সময় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্র ও পরিবারের পিসিপিআর যাচাই করত। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ বিধি কঠোরভাবে মানা হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে চোরের ছেলে/নাতি শিক্ষকতা যোগ্যতার বদৌলতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগদান করছে। এ ধরণের নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কাছ থেকে জাতি কি বেশি আশা করতে পারে? চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে ‘ঢুরা আপত্তুন হনদিন জৌরা আপ অইত নয়।’ সব শেষে না বললে হয় না বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এস.আই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পরিবারের ইতিহাস কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। যা ইতিমধ্যে দেশের আমজনতা জানতে পেরেছে। পুলিশের এস.আই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের দাবীতে নিহত রায়হানের মা রাস্তায় অনসনও করেছে। রায়হানের বোন আমেরিকায় বসে ভাইয়ের বিচারের দাবীতে প্লে-কার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এসব অশুভ বার্তা দেশের জন্য অশনি সংকেত নয় কি? সব শেষে মেজর সিনহা ও রায়হান হত্যাকান্ডসহ হাজ্বী সেলিমের পুত্রের হাতে নৌ-বাহিনীর একজন কর্মকর্তা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বিচার দেখে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তাদের পরিবার ও দেশের সব শ্রেণির মানুষ।