আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ চলছে। গত এক মাসে গোটা বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত বিশ্বের ৫ কোটিরও বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। মোট কোভিড-১৯ রোগীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন গত এক মাসে।

করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত মাস হলো অক্টোবর। এই মাসেই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে তথা প্রথম কোনো দেশে একদিনে এক লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড হয়। এদিকে ইউরোপেও ব্যাপক হারে বাড়ে সংক্রমণ। গত সাত দিনে বিশ্বে দিনে গড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

গত ডিসেম্বরে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান শহর থেকে অতি সংক্রামক এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর পর যে পাঁচ কোটি মানুষ এতে সংক্রমিত হয়েছেন এর মধ্যে ১২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। সম্প্রতি ভাইরাসটির সংক্রমণ পরিস্থিতি ছিল বিপৎজনক। অনেক দেশে লকডাউনসহ বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটিতে যেতে সময় লেগেছিল ৩২ দিন। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা ৪ কোটি থেকে ৫ কোটিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ২১ দিন। লাতিন আমেরিকাকে টপকে করোনায় শীর্ষ বিপর্যস্ত মহাদেশে ইউরোপে মোট রোগী ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। এ ছাড়া করোনায় ২৪% মৃত্যু ইউরোপে।

রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী ইউরোপে প্রতি তিন দিনে প্রায় দশ লাখ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন; যা মোট বৈশ্বিক আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি। ফ্রান্সে গত সাত দিনে প্রতিদিন গড়ে ৫৪ হাজার ৪৪০ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনবহুল দেশ ভারতেও দৈনিক গড় এর চেয়ে অনেক কম।

বিশ্বে দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপে ইউরোপের দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর তাই জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে ফের জারি করা হয়েছে লকডাউন। আবার ঘরবন্দি জীবনে আটকে গেছে কোটি কোটি মানুষ। ডেনমার্কের মতো দেশও সম্প্রতি উত্তরের বেশ কিছু এলাকা লকডাউন করেছে।

বিশ্বের মোট কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে। টানা চার দিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবারও ১ লাখ ৩১ হাজার ৪২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন; যা এ পর্যন্ত দৈনিক সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ লাখ ১০ হাজারে।

গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন এক লাখের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। গেল মার্কিন নির্বাচনে কোটি কোটি মানুষের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতিসহ নানা কারণেই বেড়েছে সংক্রমণ। অথচ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ভয়াবহতা অস্বীকার করছেন বারবার। এর মূল্যও অবশ্য দিতে হয়েছে তাকে।

গত মঙ্গলবারের মার্কিন নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন। নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ট্রাম্পের মতো হাস্যকর কথা না বলে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনে থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে ব্যবস্থা শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনে জয়ের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।