তানভিরুল মিরাজ রিপন


মিয়ানমারের মতো ডিক্টেটরশিপ রাষ্ট্রে আজ নির্বাচন হচ্ছে। অং সাং সুচি এগিয়ে নির্বাচনের সমস্ত দৌড়ঝাঁপে। চায়না কোনোভাবে চায় না সুচির সংখ্যাঘরিষ্টতা মিয়ানমারে বাড়ুক। কিন্তু জনগনের মন জয় করতে সুচির দল ‘ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল। সে সফলতা এখন ব্যালটের মাধ্যমে প্রমাণের জন্য ভোট দিচ্ছে মিয়ানমারের ভোটাররা। হয়তো সুচি জনগণের সরকার হবেন৷ আসলে মিয়ানমারের নির্বাচনের খবর নিতে গিয়ে দেখছি ডিক্টেটররা মিয়ানমারের জনগনকে ভোট দিতে কিভাবে কতভাবে সহায়তা করছে। মারছে না, কাউকে কেঁটে ছেঁটে ফেলছে না। চেয়ারে বসে ভোটের লাইন হয়েছে।

আমাদের গলদটা বোধ হয় এখানে। নাগরিকদের অসম্মান ভোটের দিন থেকে শুরু হয়। ভোটারেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, রোদে পুড়ে কিম্বা বৃষ্টিতে ভিজে যে ভোটটা পেয়ে যে কোনো দলের সংখ্যাগরিষ্টতার গর্ব তুলে তারা অথচ কোনো দিন ভোটের পুরানা নিয়ম বদলানোর কথা বলেনি। জনগনকে অসম্মান শুরু হয় ভোটের দিন থেকে। এখন বাংলাদেশে নির্বাচন হয় না, ভোটও হয় না। চলে সরকার দলের নির্ধারণতন্ত্র।

মিয়ানমার আর্মি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে হয়তো কিছু নির্ধারিত আসনে তাদের হবে। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা থাকার কারনে দীর্ঘদিন ভোট দিতে না পারার কষ্ট যেনো মিয়ানমারের প্রত্যেক নাগরিকদের বুকেপিঠে দুঃখের ছাপ হয়ে আছে। কিন্তু সিভিল সরকারের সে দুঃখ পুষিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমারের জনগনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বাড়তি আকাঙ্খা, বাড়তি আনন্দ আমি দেখছি। সকাল থেকে তারা ভোট দিচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিয়ানমারের ভোটাররা ভোট দেওয়ার পরে ভোটের চিহ্ন দেখিয়ে ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরেকজনকে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করছে। আপনি যাকে ভোট দিবেন দিন কিন্তু ভোট দিবেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী শাসিত সরকারের বিশ্বব্যাপী বদনাম। তারা গণহত্যা চালিয়েছে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। রোহিঙ্গাদের কেউ যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারে তার সমস্ত সাজসজ্জা সরকার করে রেখেছে৷ তাই এবারের মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচন রোহিঙ্গা ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া৷ বেশ কিছু আগে বুথিঢং থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দু রাজ্জাকের ( শিউ মং) সাথে বৌদ্ধ বিন লাদেন ‘ অশীন উইরাথু’র আত্মসমর্পণ নিয়ে কথা হয়েছে। অশীন উইরাথু ও সুচির জয় নিয়ে তারা মোটামুটিরকম চিন্তিত। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনো অনেকের মনে সুচির পক্ষে প্রার্থনা অব্যাহত আছে। অশীন উইরাথু নিয়ে মিয়ানমারের তরুণদের মনেও একটু চিন্তার ছাপ, যে নির্বাচনের ফলাফলে হয়তো এদিক সেদিক হতে পারে। কিন্তু সুচির দল’ই জিতবে৷

সুচি ধীরে ধীরে হয়তো গোটা মিয়ানমারের সমস্ত বিভাগের সরকার প্রধানের নেতৃত্ব নিবে৷ সে সময় হয়তো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবেন তিনি৷ এমনটা মনে করছেন বর্মি তরুণেরা৷ আসলে কি তাই হবে? যিনি মিয়ানমারের প্রতিনিধি হয়ে আইসিজে ‘ এ করা গাম্বিয়ার মামলায় লড়ছেন মিয়ানমার আর্মির সমস্ত অন্যায়ের পক্ষে। অনেকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু অনেকের দাবি ফিরিয়ে নিবে। কেনো এখন ফিরিয়ে নিতে পারছেনা, এ প্রশ্নে প্রত্যেকের উত্তর সার্ভাইব ( Survive) করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে NLD কে টিকিয়ে রাখতে আরও সময়ের প্রয়োজন, আর শতভাগ মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়নের লক্ষ্যে সুচির দল কাজ করছে৷ তাই তাঁদের দলও এগিয়ে আছে জনগণের পছন্দের প্রথমে৷

এদিকে বাংলাদেশের ৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও বেড়েছে ৷ বাড়তি নিরাপত্তা ও নজরদারিতে আরও কয়েকদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সকল রোহিঙ্গাকে রাখা হবে। যাতে করে মিয়ানমারের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।

এখন মিয়ানমারে বিকাল ৫:১৩ । সূর্য ঢলছে। কি ফলাফল হবে, জনগণের রায়ের মূল্যায়ন কতখানি হবে তা জানান দিবে ফলাফল। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনেকেই নির্বাচন বিষয়ে মন্তব্য করছেন । তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের উদ্দেশ্য বলছেন, ভোট কিন্তু একটি ৫ বছরের জন্য কাকে নির্বাচন করছেন দেখে শুনে করবেন।


লেখক: এশিয়ান রাজনীতি প্রতিবেদক, ট্রান্সকন্টিনেন্টাল টাইমস, স্পেন।