সিবিএন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সরকারের আর কারও ওপর দেশের সংখ্যালঘুদের আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। শনিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নির্যাতনের বিচার দাবিতে নগরের নিউমার্কেট মোড় এলাকায় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা জানান।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুর স্বার্থবান্ধব। তিনি সংখ্যালঘুরা শান্তিতে থাকুক সেটি চান। কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলাদেশের মানচিত্র ও স্বাধীনতাকে গ্রাস করতে চায়। তারা ইতিমধ্যে স্লোগান দিয়েছে- ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে হিন্দুমুক্ত করবে। তারা এটিও বলছে, তাদের ১০ হাজার বাহিনী প্রস্তুত। তারা শুধু আমীরের নির্দেশনায় আছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে যাই হোক, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে সমঅধিকার ও সমমর্যাদার জন্য এ দেশের সংখ্যালঘুদের লড়াই করতে হবে তা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাবিনি। ধর্ম অবমাননার দায়ে যে হামলাগুলো চলছে- যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগ পর্যন্ত আমরা শুনিনি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কারও ধর্মের অবমাননা করেছে।

অন্য ধর্মের বিষয়ে সংখ্যালঘুরা শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শুধু নিজেদের ধর্মের ব্যাপারে নয়, অন্যের ধর্মের ব্যাপারেও শ্রদ্ধাশীল। এখনও আমরা মাজারে যাই। এখনও আমাদের নারীরা যখন মসজিদের পাশ দিয়ে যান, তারা মাথায় ঘোমটা দেন। এটিই আমাদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে সবাই বিশ্বাস করছে, বিশ্বাস করে এখনও।

তিনি বলেন, ধর্ম অবমাননা অজুহাত তুলে হামলা চালানো হচ্ছে। সংখ্যালঘু ছেলে-মেয়েদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

‘তিথী সরকার, যার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়, ধর্ম অবমাননার দায়ে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও পিটিয়ে হত্যা ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসবের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হলেও কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করেনি দাবি করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কুমিল্লার মুরাদনগর পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্যাতন করে যাচ্ছে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ করেনি।

‘অথচ ১৯৬৪ সালে আইয়ুব বিরোধেী আন্দোলনকে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে হারিয়ে দেওয়ার জন্য সেদিন যখন আইয়ুব খান সংখ্যালঘুর ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিলো- রাজনৈতিক নেতা আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিলো। এ কমিটি একটি প্রচারপত্র বের করেছিলো, যেখানে লেখা ছিলো- বাঙালি রুখে দাঁড়াও। আজকে সেই রাজনৈতিক দল কোথায়, নেতৃত্ব কোথায়?’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান- বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হতে পারে, কিন্তু বিশ্বে সংখ্যালঘু নয়। এই দেশের সংখ্যালঘুকে দুর্বল করে গণতন্ত্রের উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা দুর্বল হলে অন্যদেশের সংখ্যালঘুরাও দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে যাবে কি-না- তা আজকের রাজনৈতিক নেতাদের বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা পালিয়ে যাব না, অন্যায়-অত্যাচার যাই হোক দেশেই থাকবো। প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবো। তখন সামনে কে? সেটি আমরা দেখবো না। যদি সরকার দাবি না মানে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রয়োজনে লং মার্চের মত কর্মসূচি দেব। পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাব।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, পরশু এক বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজত নেতা নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি সেখানে বলেছেন, মানবাধিকার বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। সুনিপুন তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।

কর্মসূচিতে সংহতি জানান কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘হতাশাজনক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই একাট্টা হয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে না দাঁড়ালে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে তখন সবারই ভাবা দরকার এ দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ আছে কি না?