পথের শিক্ষা

প্রকাশ: ৭ নভেম্বর, ২০২০ ১০:৫১

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনেক সংবাদকর্মী ছিল সেদিন। সিনহা হত্যার ফলোআপ নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আমিও পিটিসি দিচ্ছিলাম। দু’টার সংবাদে ধরাতে হবে। প্রথম বাক্য বলার পর দ্বিতীয় বাক্য শুরু করবো, ঠিক সেই মুহুর্তে অস্বাভাবিক শব্দে পিটিসি থেমে যায়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ফটকে একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি অপর এক ক্যামরাপার্সনকে মারধর করছেন। অথচ খুব ভদ্র সেই ক্যামরাপার্সন।
আমি দৌড়ে দুজনের মাঝখানে গেলাম। বললাম- ভাই আপনারা দুজনেই আমাকে মারেন, রাগ না কমা পর্যন্ত মারেন।
ক্যামরাপার্সন খুবই লজ্জিত, তাঁর চোখে পানি।
মারমুখী টিভি সাংবাদিক ইচ্ছেমতো মারতে পারেননি; তাই কিছুটা অতৃপ্ত।
তাঁকে বললাম- ভাই, আমি পিটিসি দেব? নাকি ক্যামরা আপনার দিকে ঘোরাব বলেন? নাহয় আপনার নিউজ কাভার করি।
ততক্ষণে আরও কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক সেখানে হাজির। পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক।
ক্যামরাপার্সনকে বুকে জড়িয়ে নিলাম, পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে অনুরোধ করলাম- এই ঘটনাটি ভুলে যেতে, ক্ষমা করে দিতে।
এরপর তাড়াহুড়ো করে পিটিসি দিলাম, দুইটার সংবাদে তা প্রচারিত হয়।
ঠিক পরের সপ্তাহে ওই টিভি সাংবাদিকের একটি বহিষ্কার আদেশ দেখি ফেইসবুকে।
মোটেও এই ঘটনার জন্য চাকরি যায়নি। সেটা অন্য কারণে গেছে।
আজ ওই সাংবাদিককে পথে ক্রস করলাম। দুজনেই গাড়িতে ছিলাম। তাঁকে অতিক্রম করার পর থেকে গাড়ি চালাতে চালাতেই অনেকগুলো শিক্ষা নিচ্ছিলাম। পথের শিক্ষা।
পথ চলতেও অনেক সময় আমি অনেক চমৎকার কিছু শিক্ষা পেয়ে যাই। এই শিক্ষা আমি নিজের ভেতর রাখি, কাজে লাগাই।
অনেক কথাই মনে পড়ছিল- সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি একজন সাংবাদিক হয়ে গেছেন। টেলিভিশনের বোম হাতে ঘুরঘুর করছেন। সিনিয়র সাংবাদিকদের বিষয়ে আজেবাজে মন্তব্য করছেন। সিনিয়রদের নিয়ে একটু বাজে মন্তব্য না করলে নিজেকে বড় সাংবাদিক হিসেবে অন্যরা সমীহ করবে না। বুঝতে হবে এখানে অনেক কৌশলে বড় হতে হয়।
আচ্ছা, তা বুঝলাম- কিন্তু হুট করে কিভাবে সাংবাদিক হয়ে যান তাঁরা? সকালে ঘুম থেকে উঠে টিভি সাংবাদিক হয়ে যায় কিভাবে?
ওই সব টিভি চ্যানেল আবার কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়। উত্তর, দক্ষিণ- নানা নামে। একজনকেই ঠিকমতো বেতন দেয়না, আবার কয়েকজনকে কেন নিয়োগ দেয়?
অপেশাদার, যাকে কোনদিনও সাংবাদিকতা করতে দেখিনি- সেরকম লোককে কিভাবে নিয়োগ দেয় একটি টিভি চ্যানেল?
যাক! এসব কথা থাক! তবে ওইসব টিভি চ্যানেলও একদিন হারিয়ে যাবে নিশ্চিত।
পথ চলতে যে শিক্ষা পেয়েছি, তা হচ্ছে- ধান্ধাবাজি দিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না।
পেশাদারিত্বের সাথে চললে একজন সাংবাদিক একটি প্রতিষ্টানে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্র পেয়ে যান।
অপেশাদারদের জন্য একজন পেশাদার সাংবাদিক সাময়িক বিব্রতবোধ করলেও দিনশেষে ওই অপেশাদাররাই কিন্তু তুলনা করার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।
অন্ধকার রাত না থাকলে, দিনের আলোর মূল্যায়ন কিভাবে করত মানুষ!

মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল
বাংলাদেশের একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
বর্তমানে তিনি ভয়েস অফ আমেরিকা ও এটিএন বাংলায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত।