মোহাম্মদ ম্যাক্স


অনেকেই সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্ট্রল কলেজ, সিনেট, হাউস বুঝতে পারছেন না, সংশয় দূর করতে, আমি এখানে ব্যাখ্যা দিলাম।

আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্ট ৮০% চেয়েও বেশি ভোট পাওয়ার পরেও নির্বাচিত হতে পারবেন না, আবার অপরদিকে ২০% জনগনের ভোট পেয়েও একজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

প্রশ্ন হল কিভাবে ? আসুন এবার, ইলেক্ট্রল কলেজের আগে বলে রাখি স্বাভাবিক কতকগুলো নিয়ম, যেমন আমাদের দেশে পার্লামেন্ট এক কক্ষ বিশিষ্ট ( Unicameral ) আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ( bicameral) .
একটি সিনেট আর একটি কংগ্রেসে।

সিনেটের সদস্য ১০০ জন, কিভাবে? প্রত্যেক অংগরাজ্য থেকে ২ জন করে, এর মানে ৫০ টি অংগরাজ্য থেকে ১০০ জন, গতকালের নির্বাচনে যা রিপাবলিকান ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে, ৫১ টি পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা, আর তারা পেয়েছে ৫২ টি অপরদিকে ডেমোক্রেটিক পেয়েছে ৪৮ টি, ফলে সিনেট হারিয়েছে তারা।

গর্ভনর নির্বাচনে ও হেরেছে ডেমোক্রেটিক , ৫০ টি গর্ভনর পদে ২৩ টি পেয়েছে আর রিপাবলিকান ২৭ টি।

এবার আসুন কংগ্রেসের কি অবস্থা দেখি, ৪৩৫ জন সংসদ সদস্য, পেতে হবে ২১৮, সর্বশেষ পাওয়া খবরে ডেমোক্রেটিক পেয়েছে ১৯৩ আর রিপাবলিকান ১৮৫।

এবার আসুন ইলেক্টল কলেজে নিয়ে বলি।

যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে এক্ষেত্রে সিনেট, গভর্নর, কংগ্রেসম্যান, শেরিফ, মেয়র সবাই একটি প্রক্রিয়া দিয়ে যায়, আলাদা গন্য হউক বা না হউক একসাথে পুরো দলটিকে ইলেক্ট্রল কলেজ বলে, আর স্পষ্ট করে বললে যেমন, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ৫৩টি কংগ্রেস এর আসন আছে, তার সাথে ২ টি সিনেট এর মানে মোট ইলেকট্রল কলেজের সংখ্যা ৫৫, তেমনি সব অংগরাজ্যগুলোর মোট সংসদ সদস্য এর সাথে সিনেট যোগ হয়ে হয় ইলেকট্রল কলেজ। মোট ইলেকট্রল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮, কিভাবে? সিনেট ১০০
কংগ্রেসম্যান ৪৩৫
আর
ওয়াশিংটন এর জন্যে স্পেশাল ৩ টি, মোট ৫৩৮।

এর মধ্যে কোন দলকে পেতে হবে ২৭০ টি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবার বলি।

একটি উদাহরণ দিলে সহজ হবে, ধরুন কক্সবাজার দিয়ে বলতে চাই, , এখানে সংসদীয় আসন ৪ টি এর পরিবর্তে ৫ টি ধরা যাক, রিপাবলিকান যদি ৩ টি জেতে আর ডেমোক্রেটিক যদি ২ টি জিতলেও কাজ হবেনা, সংসদের আসন সংখ্যার দিক দিয়ে এ ২ টি গন্য হলেও ইলেকট্রল কলেজের কারনে এ ২ টি রিপাবলিকানদের দিয়ে দিতে হবে, ফলে কক্সবাজারের ইলেকট্রল কলেজের ৫ টিই রিপাবলিকানদের খাতায় যোগ হবে।

যেমন, যদি ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫ টি কলেজের মধ্যে ডেমোক্রেট ২৮ টি পায় তাহলে বাকি ২৭ টি গন্য হবে তাদের খাতায়।

এটিকে বলা হয়, ‘ পপুলাস ভোট’।
আবারও কক্সবাজার নিয়ে মোট ভোটের সংখ্যা বের করি, ধরুন কক্সবাজারের ৫ টি আসনে ৩ টি রিপাবলিকান জিতে গেল যথারীতি খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে, ভোট সংখ্যা ধরলাম, ১ নং ৬-৫
২নং ৫-৪
৩ নং ৮-৭
অর্থাৎ প্রত্যেকটি আসনে ১ ভোট করে পেয়ে জয়ী হয়েছে।
আর হেরেছে অন্য ২ টিতে নিম্নরুপে ৪ নং ৫ – ১০০
৫ নং ৬ – ২০০ তারতম্যে,
এবার মোট ভোটে আসি, এই কক্সবাজার অংগরাজ্য থেকে ভোট পেয়েছেন রিপাবলিকান মোট ৩০ ভোট আর ডেমোক্রেট ৩১৬ এরপরেও ইলেকট্রল কলেজে হেরে গেলে।
এদিকে সিনেট সদস্য মিলে ঘোষণা করবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আর কংগ্রেস সদস্যদের ঘোষণায় হবে প্রেসিডেন্ট ।
মনে হচ্ছে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে অথবা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে এই ফলাফল।
২০০০ সালের নির্বাচনে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের কারনে প্রায় কাছাকাছি থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র ওহিও অংগরাজ্যের ইলেকট্রল কলেজের কারনে রিপাবলিকানর জেতে যান আর ঠিক ৪ বছর পরে ২০০৪ সালে আবারও ফ্লোরিডার কারনে ডেমোক্রেটি হেরে যায়, পরে বারাক ওবামা একাই সিনেট, কংগ্রেস আর পপুলাস ভোট নিয়ে প্রথম ব্ল্যাকম্যান হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন।
এবার আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন।


the writer is the English correspondent of Coxsbazarnews.com