মুহাম্মদ শাফাআতুজ্জামান নাঈম

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনায় আক্রান্ত মানব সভ্যতা। সভ্যতার সোপান শিক্ষা ব্যবস্থায় এর প্রভাব লক্ষ্যনীয়। অনির্দিষ্টকালের জন্যে থেমে গিয়েছিল শিক্ষা-কার্যক্রম।এ ক্ষেত্রে একদিকে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেমন অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়,অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সমাজ, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা- কর্মচারী, শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিও চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হয়।
সরকারি, আধা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের শিক্ষক -কর্মকর্তাদের সম্মানী চালু রাখলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক- কর্মকর্তাদের পাশে তেমন একটা দাঁড়াতে পারেনি।এটি চরম বাস্তবতা। তাই অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম চালু রেখে হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক করতে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করছে।পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপকারের কথা তু আছেই।
কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় মানুষ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে এক প্রকার বাধ্য হল।এক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
উন্নত বিশ্বে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম, শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করে তুলার পদ্ধতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়।ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই সুবিধা,কম্পিউটার ল্যাব, প্রযেক্টরে ক্লাস গ্রহন প্রভৃতি শিক্ষা-কার্যক্রমের মাধ্যম হয়ে আসছিল। বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষা-কার্যক্রমেও প্রযুক্তির প্রভাব খুবই লক্ষ্যণীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম এর দিকে বাধ্য হয়ে ঝুকছে।এটি অত্যন্ত ভাল দিক।যা শুরুতে কষ্টকর হলেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তৃতি লাভে অতীব প্রয়োজন।
কিন্তু এ পর্যায়ে এসে আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা ও সরকারের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

আমাদের দেশে এখনো অনেক স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা নেই।আবার অনেক শিক্ষক – শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্ট ফোন কিংবা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই।যাদের আছে তাদের বিশাল একটি অংশ এখনো প্রযুক্তির ব্যবহারে খুবই দুর্বল। এ ত্রিমুখী সমস্যাকে সামনে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের শিক্ষা-কার্যক্রম।
যেখানে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছায়নি,সেখানে দ্রুত ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছাতে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।সুবিধাবঞ্চিত স্থানগুলিতে টাওয়ার বসিয়ে ইন্টারনেট সুবিধা বাড়াতে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সরকার চাপ প্র‍য়োগ করতে পারে।দেশীয় কোম্পানি টেলিটক এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে টেলিটক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্যে জুম এপে ক্লাসের যে সুবিধা দিচ্ছে তার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে পারে।

অনেক স্কুল,কলেজ,মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা স্বত্বেও সদিচ্ছার অভাবে ক্যাম্পাসে কিংবা সংশ্লিষ্ট স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা বাস্তবায়ন করে না।এটিও সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে।
উন্নত দেশগুলোতে ক্যাম্পাস জুড়ে ওয়াইফাই সুবিধা, কম্পিউটার ল্যাব, ই-লাইব্রেরি প্রভৃতি সুবিধা চালু রাখে সার্বক্ষণিক। আমাদের সীমাবদ্ধতার দিক বিবেচনা করে অন্তত নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে হলেও উক্ত সুবিধাগুলো দেয়া যায় কিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।শিক্ষার্থীদের সুবিধাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

পাশাপাশি আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদেরও আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে পারদর্শী করে তুলতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার সহজবোধ্য করার বিকল্প নেই, এটি মাথায় রাখতে হবে।
অন্তত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর
E-mail, Zoom App,Google Scholar এর ব্যবহার জানতে হবে।।বিভিন্ন website থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা শিখতে হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান চাইলে উক্ত বিষয়াবলীর উপরে সংক্ষিপ্ত কর্মশালার আয়োজন করতে পারে।আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্বের আধুনিকায়নের এ যুগে নিজেদেরকে যোগ্য ও উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে কাংখিত সফলতায় পৌঁছা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।এ লক্ষ্যে সরকার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শিক্ষক -শিক্ষার্থী সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাবে আমাদের অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম।

লেখকঃ
শিক্ষক,গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
E-mail: shafaatnaim@gmail.com