মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান (পিপিএম) করোনামুক্ত হয়েছেন। গত ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে তাঁর শরীরের নমুনার ফলোআপ টেস্টের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান তাঁর নিজস্ব ফেসবুকে ২৪ অক্টোবর রাত্রে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামানের শরীরে গত ৩ অক্টোবর করোনা সনাক্ত হয়। গত ৬ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি কক্সবাজার শহরের ইউনিয়ন হাসপাতালে আইসোলেনে থেকে চিকিৎসা নেন। করোনা সনাক্ত হওয়ার দীর্ঘ ২২ দিন পর এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান করোনামুক্ত হন।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান তাঁর স্ট্যাটাসে তাঁর অসুস্থাতার সময় তাঁকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে, তাঁর খোঁজখবর নিয়ে, বিভিন্নভাবে তাঁকে যাঁরা সাহস যুগিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অসুস্থকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন ছিলো তাও তিনি তুলে ধরছেন। বিশেষ করে তাঁর পূর্ববর্তী চাকুরীস্থল ঝিনাইদহ জেলার নাগরিকদের তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভসলোবাসার কথা স্ট্যাটাসে তুলে ধরছেন অবলীলায়।

এসপি মোঃ হাসানুজ্জামান (পিপিএম) তাঁর নিজস্ব ফেসবুকে দেওয়া আবেগঘন স্ট্যাটাসটি নিন্মে তুলে ধরা হলো :

“সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ রহমতে অবশেষে অদ্য ২৪.১০.২০২০ ইং আমার COVID -19 নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
একটা আনপ্রেডিক্টেবল রোগ এটি। মানসিক এবং শারীরিভাবে বেশ দুর্বল করে দেয়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে ঝুঁকি নাই। তবে রোগটি নিয়ে হেলাফেলা করলে জীবন বিপন্ন হয়-এটা সবারই জানা। মানসিকভাবে যদি শক্ত থাকা যায়, তাহলে ঝুঁকি কম। এরোগে আমার অবশ্য শরীরের তাপমাত্রা কখনোই ৯৯ ডিগ্রীর উপর উঠে নাই। কৃত্রিম অক্সিজেনও আমার প্রয়োজন পড়ে নাই। তবে বেশ কয়েকদিন মুখে কোন রুচি ছিলনা এবং স্বাদ/গন্ধ পেতাম না।

কৃতজ্ঞতা জানাই, কক্সবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এর অধ্যাপক ডাক্তার অনুপম বড়ুয়া (কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ), যিনি ছিলেন আমার প্রধান চিকিৎসক। আমি ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু তিনি আমার শারীরিক অবস্থা দেখে বললেন যে, কক্সবাজারে আপনার চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হবে না। কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই-একই হাসপাতালের তরুণ কিন্তু Covid চিকিৎসায় অত্যন্ত দক্ষ ডাক্তার আরাফাতের প্রতি। চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা তিনি।
আমার প্রতি এত যত্ন নিয়েছেন, পাশাপাশি সাহস এবং মনোবল যুগিয়েছেন যা আমি কখনই ভুলতে পারব না। আমি মূলত: এখানকার একটি প্রাইভেট হাসপাতাল (ইউনিয়ন হাসপাতাল) এ ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। একটানা প্রায় ২০ (বিশ) দিন ছিলাম ওখানে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান জনাব আরিফ মাওলা ও এমডি জনাব নুরুল হুদা সম্পর্কে সম্পর্কে দুটি কথা না বললে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব। সকাল, বিকাল, রাত তিন বেলা উনারা আমাকে দেখে যেতেন। চিরসবুজ মনের অধিকারী এই দু’টি মানুষ নিজেদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে আমার পাশে এসে বসে থাকতেন এবং গল্প করতেন। এতে কিছুটা সময় আমার কাটত এবং কষ্টটাও কিছু লাঘব হতো। হাসপাতালের ডিউটি ডক্টরস, ম্যানেজার , নার্স, আয়া, থেকে শুরু করে প্রতিটি সদস্যই আমার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এবং যত্নশীল ছিলেন। নিজের পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে আমি সরকারি বাংলোয় না থেকে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলাম।
কৃতজ্ঞতা জানাই, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাদের সাথে আমার এখনো তেমন/আনুষ্ঠানিক পরিচয় হয়নি, তারাও আমাকে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন। সরাসরি হাসপাতাল এসে আমাকে দেখার জন্য ভিড় করেছেন।

অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি-বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের প্রতি, COVID আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং নিরন্তর সাহস যুগিয়েছেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ আমার মাননীয় ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ মহোদয় এর প্রতি, তিনি প্রতিদিন দুইবার করে আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন। রেঞ্জ অফিসের অন্য দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি মহোদয়ও নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি-অতিরিক্ত আইজিপি এপিবিএন মহোদয়ের প্রতি। ১৪ এপিবিএন’র অধিনায়ক জনাব আতিক স্যার কে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাসপাতালে এসে বেশ কিছুক্ষন সময় আমার পাশে বসে ছিলেন এবং আমার শারীরিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন ও সাহস যুগিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা জানাই, আমার পুলিশ ব্যাচমেট, বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশ সহকর্মীগণ, জনাব সরোজ কুমার নাথ, জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ মহোদয়, সকল শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু এবং পরিচিতজনদের। তারা আমাকে ফোন করে, মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আমার জন্য দোয়া করেছেন।

এবার আসি আমার পূর্ববর্তী কর্মস্থল ঝিনাইদহ জেলার মানুষের কথা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি ফোন এসেছে তাদের কাছ থেকে। সেখানকার মসজিদে আমার রোগ মুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয়েছে। উক্ত জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ, সাংবাদিক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ আমার ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছেন। মাননীয় পাঁচজন সংসদ সদস্য একাধিকবার আমাকে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আরোগ্য কামনা করেছেন। এমনকি ঝিনাইদহ থেকে একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি সরাসরি আমাকে দেখার জন্য গত ২২/১০/২০২০ ইং কক্সবাজারে আমার বাসায় এসে চলে এসেছিলেন। আমি অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার সম্মানে দুপুরে একসাথে খাবার গ্রহণ করেছি, তার থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। আসলে আবেগের তাড়নায় এই কথাটি বলে ফেললাম। আজকে বাসায় ঝিনাইদহের স্বনামধন্য তরুণ চিকিৎসক ডাক্তার জাকির তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন আমাকে দেখার জন্য।
কৃতজ্ঞতা ডাক্তার জাকির এর প্রতি, আমার করোনা আক্রান্তকালীন তিনি প্রতিদিন আমাকে অন্তত একবার করে ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার পর্যায় (প্রয়োগকৃত ঔষধ ও ইনজেকশন) নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার যে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে-এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

একইসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই কারণে যে, অনেক নিকটজন, পরিচিতজনের ফোন আমি রিসিভ করতে পারি নাই।

হে সম্মানিত ঝিনাইদহবাসী!!
আমি আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
আমি আপনাদেরই লোক।
এই পরিচয় আমার সদাই হোক।”

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের নতুন পুলিশ সুপার হিসাবে মোঃ হাসানুজ্জামান (পিপিএম) দায়িত্ব গ্রহন করেন। এর আগে তিনি ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।