মহসীন শেখ :

স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁদে পড়ে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামীলীগের ভিতরে বিবাদ সৃষ্টি করতে কোন ধরণের নিয়ম ও আইন তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের নতুন এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবী করছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ অনেকেই। নির্বাচন না করেই এ্যাডহক কমিটির নামে পকেট কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন রেড ক্রিসেন্ট সদর দপ্তরের বিরুদ্ধে। এমনকি আজীবন সদস্য নয় এমন কয়েকজনকেও এ্যাডহক কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন এ্যাডহক কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য তাহামিনা চৌধুরী লুনা এটি অবৈধ কমিটি দাবী করে তিনি পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। কথিত এই এ্যাডহক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করতে রেড ক্রেসিন্টে সোসাইটি জাতীয় সদর দপ্তরের মহাসচিব বরবারে লিখিত আবেদন করেন বর্তমান ইউনিটির সকলে।

রবিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা এসব অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ই অক্টোবর কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের নবগঠিত এ্যাডহক কার্যনির্বাহি কমিটি গঠন করে একটি আদেশ দেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি।

আদেশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের বর্তমান কার্যনির্বাহি কমিটির অব্যবস্থাপনা ও বিতর্কিত কর্মকান্ড ইউনিটকে অকার্যকর অবস্থানে ফেলেছে। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা সোসাইটির ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে।

কক্সবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিটের কার্যনির্বাহি কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয় সোসাইটিকে অবগত করেছেন। ইউনিট চেয়ারম্যানের এর অবগতি ও অনুমোদন ব্যতিরেকে কার্যনির্বাহি কমিটি কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বর্তমান কার্যনির্বাহি কমিটি তড়িঘড়ি করে পছন্দমত নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি প্রহসনের নির্বাচন করার দুরভিসন্ধি করছিল। এতে, রেড ক্রিসেন্ট এর মত মানবিক প্রতিষ্ঠান এবং কক্সবাজার ইউনিটের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। ১৯ অক্টোবর ২০২০ হতে ১৮ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ৩ মাস মেয়াদে কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট পরিচালনার জন্য এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন, মোস্তাক আহমদ চৌধুরী-চেয়ারম্যান (পদাধিকারবলে), এড. আয়াছুর রহমান-ভাইস চেয়ারম্যান, খোরশেদ আলম-সেক্রেটারি, সদস্য যথাক্রমে, জিয়া উদ্দিন জিয়া, হামিদা তাহের, চন্দন শর্মা, জাহাঙ্গীর আলম, সোহেল আহাম্মদ বাহাদুর, মাহমুদুল করিম মাদু, তাহমিনা আক্তার লুনা ও অধ্যাপক আবদুর রহিম।

কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের বর্তমান সেক্রেটারি আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন- নির্বাচন না করে, কাউকে না জানিয়ে হুট করে সদর দপ্তর থেকে সবাইকে অনিয়মের অভিযুক্ত করে চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি। যদি কেউ অনিয়ম বা দুর্নীতি করে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারত। নির্বাচন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা যেতো। দুর্নীতি করে কেউত রেহায় পাবে না, আজ না হয় কালত প্রমাণ হবে। তখন তাকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন না করার জন্য হুট করে সদর দপ্তর এমন কাজটি ঠিক করেনি। নিয়ম ও আইনের বাইরে এমন কাজটি করেছে ঢাকায় বসে। জাহাঙ্গীর আলম ও অধ্যাপক আব্দুর রহিম নামের দুই ব্যক্তিকে কথিত এ্যাডহক কমিটিতে কার্য নির্বাহি সদস্য করা হয়েছে। অথচ তারা আজীবন সদস্য নয়। সদস্য নয় এমন কাউকে এ্যাডহক কমিটিতে রাখাও যায় না।

কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের বর্তমান সহ-সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন না করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় সদর দপ্তর থেকে প্রেরণ করা পরিপত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৯ অক্টোবর। কিন্তু আমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে। কারণ আমরা যাতে বন্ধের সময় আইনের আশ্রয় নিতে না পারি। এমন জঘন্য লোক তারা।

তিনি বলেন- সদর দপ্তরের প্রেরণ করা পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারসহ সোসাইটির ৬৮টি ইউনিটকে নিজ নিজ নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা (নির্বাচনসহ) সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। সে অনুসারে মেয়াদ রয়েছে পুরো ডিসেম্বের পর্যন্ত। সেই নির্দেশনা না মেনেই হুট করে কথিত এ্যাডহক কমিটি ঘোষনা করা ভালো হয়নি সদর দপ্তরের। তাছাড়া নির্বাচন করার একটি ৪৫ দিনের শিডিউল রয়েছে। ওই শিডিউলে ফরম নেওয়া, জমা দেওয়া, যাচাই-বাছাই করা ও নির্বাচনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। যে অনুসারে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু সেই নির্বাচনের নির্দেশনাও না মেনেই হুট করে কথিক পকেট কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। যে এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদেরও সময় নেই নির্বাচন করার। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা বিরোধীরা সক্রিয় হয়ে এই ভূয়া এ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। তারা আওয়ামীলীগের ভিতরে বিবাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

নুরুল আবছার বলেন, সদর দপ্তরের পরিপত্র অনুসারে বর্তমান কমিটির মাধ্যামে প্রকাশ্যে নির্বাচন করে একটি কমিটি গঠন করা হোক। যেখানে সব সদস্য ভোট প্রয়োগ করবে।

এদিকে ২৩ অক্টোবর জাতীয় সদর দপ্তরের মহাসচিব বরাবরে কথিত এ্যাডহক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার লক্ষ্যে একটি লিখিত আবেদন করেন বর্তমান কমিটি। এছাড়া এই কমিটির বিরুদ্ধে আইনী নোটিশও প্রদান করা হয়েছে।

নতুন এ্যাডহক কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য তাহামিনা চৌধুরী লুনা বলেন, হুট করে যে এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে এটি অবৈধ কমিটি। নিয়ম না মেনেই পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে। আমি নিজেও অবগত ছিলাম না নতুন এ্যাডহক কমিটির বিষয়ে। পরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে বুঝতে পারছি। দ্রুত সময়ে কথিত এই এ্যাডহক কমিটি থেকে আমি পদত্যাগ করবো।