এম.এ আজিজ রাসেল :
একদিকে করোনার সংক্রমণ, আর অন্যদিকে বৃষ্টি। এবার পূজা অর্চনাকারীদের জন্য পরিবেশটা বেশ প্রতিকূল। তারপরও থেমে নেই মা দুর্গার ভক্তরা। অন্যান্যবারের মতো উৎসবে ভাটা দেখা গেলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি দিতে পূজামন্ডপে এসেছেন কেউ কেউ।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) শহরের লালদিঘির পাড়স্থ সরস্বতি বাড়ি, কালী বাড়ি, গোলদিঘির পাড়স্থ ইন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি, ঘোনারপাড়া পূজামন্ডপ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন মন্দিরে নবপত্রিকা প্রবেশ ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শেষে অঞ্জলি দেন ভক্তরা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন হাতিতে চড়ে।
ভক্তদের বাসায় বসেই অঞ্জলি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। তাই মহাঅষ্টমীতেও ভক্তরা বাসায় বসেই অঞ্জলি দেবেন বলে জানায় পূজা উদযাপন পরিষদ।

বিকালে গোলদিঘির পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর মাঝেই অনেক ভক্ত এসে অঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এসময় ভক্তদের ভিড় করতে দেখা যায়নি। ভিড় না করতে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। মন্ডপে ভক্তদের উপস্থিতির সংখ্যাও ছিল অনেক কম।
কথা হয় গৃহবধূ সুমা দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন বা ফেসবুকের মাধ্যমে পূজা দেওয়া, আর সরাসরি মন্ডপে এসে অঞ্জলি দেওয়ার মর্যাদা আলাদা। মা দুর্গাকে অঞ্জলি জানাতে মন্ডপে এসেছি। আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন পুরো পৃথিবীকে করোনামুক্ত করে দেন।’
ঘোনার পাড়া পূজামন্ডপের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ পাল বিশু বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পূজা উদযাপন করছি। এর মধ্যই মায়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টিটাও কিছুটা বিঘœ ঘটাচ্ছে।’
চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শনিবার (২৪ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী পূজা। রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে মহানবমী পূজা ও সোমবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা বলেন, “২৬ অক্টোবর শোভাযাত্রাবিহীন বিশে^র দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। কিন্তু সেখানে আনুষ্ঠানিক কোন অনুষ্ঠান করা হবে না। এবার সৈকতে শুধু রামু, উখিয়া, সদর উপজেলা ও কক্সবাজার পৌর শহরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। বাকিরা স্ব স্ব উপজেলায় প্রতিমা বিসর্জন দেবে। বিসর্জনে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পূজার্থীদের সন্ধ্যার আগেই মন্ডপে যাওয়ার অনুরোধ জানান। কারণ সন্ধ্যার পর থেকে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়বে।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ বলেন, “এবারের পূজা সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করা হবে। দুর্গাপূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা হিন্দুদের কিন্তু মূলবাণী সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে নিবেদিত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে সর্বজনীন শারদীয় দূর্গাপূজা। সব মানুষের সুখ-শান্তি কামনায় এবং সর্বজীবের মঙ্গলার্থে হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে নানা উপচার ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে প্রতিবছর উদযাপন করে থাকে শারদীয় দুর্গোৎসব। কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এই আনন্দধারায় এবার কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তবে আশাকরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বাধা অতিক্রম করতে আমরা সক্ষম হবো। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন, এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।”
তিনি আরও বলেন, “পূজায় রং ছিটানো ও বাজি ফুটানো যাবে না। নামাজ শুরু আগে ও পরে ৩০ মিনিট মন্ডপে বাদ্যযন্ত্র ও মাইক বন্ধ থাকবে।”
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, “সাগরে লঘুচাপের কারণে সমুদ্র বন্দর সমূহকে ৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।”
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান জানান, সাগরে লঘুচাপের কারণে সমুদ্র বন্দরসমুহকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারও (২৩ অক্টোবর) ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।