সিবিএন ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য দাতা দেশগুলো দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা কার্যক্রমের কথা বললেও এরসঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বুধবার (২১ অক্টোবর) নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব একথা জানান। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ’রোহিঙ্গাদের জন্য জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে আশানুরূপ সাড়া পায়নি। যারা এর সিংহভাগ বহন করে তারা এই ঘাটতি পূরণ করা যায় কিনা সেটি নিয়ে কনফারেন্স করছেন। যেসব দেশে রোহিঙ্গা আছে তাদের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে কথা বলবেন। এরপর প্লেজিং কনফারেন্সে প্রায় ৫০টি দেশ অংশগ্রহণ করতে পারে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা মানবিক সহায়তা দিচ্ছে তাদের কিছু বাজেটারি বাধ্যবাধকতা থাকে। অনেক দেশে দুই বছর বা তিন বছর মেয়াদি বাজেট হয় এবং তারা হয়তো তাদের বাজেটে এই মেয়াদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে চায়। দীর্ঘমেয়াদি হলে হয়তো তাদের জন্য সুবিধা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই।’

বাংলাদেশ কী চায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটি বলেছি, বাংলাদেশ চাইবে বৈঠকটি শুধু মানবিক সহায়তার জন্য যেন না হয়। এখানে যেন সমাধানের একটি বিষয় থাকে। একটি টেকসই সমাধানের জন্য কার কী করণীয় আছে সে বিষয়ে যেন আলোকপাত করা হয়। সামনে কীভাবে এগুতে চাই তার একটি অংশ হতে পারে মানবিক সহায়তা এবং এটি যেন আন্তর্জাতিকভাবে শেয়ার করা হয়। সেটিই আমাদের আশা থাকবে।’পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন

বাংলাদেশের খরচ
রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ অর্থ দিলেও এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশেরও অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে ও সুযোগ হারাচ্ছে; পররাষ্ট্র সচিব এই কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের কী পরিমাণ খরচ হচ্ছে সেটির হিসাব করা। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি লোকদের ব্যবহার করছি, পরিবেশের কী ক্ষতি হচ্ছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠী সুযোগ কতটুকু হারাচ্ছে, সামাজিক খরচ এবং অন্যান্য মানবিক খরচ কী হচ্ছে। এগুলোর একটি হিসাব করা যেতে পারে। হয়তো সঠিক হবে না, তবে বড় একটি অবদান বাংলাদেশের আছে।’

ভাসানচরে দেশের অর্থে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুতরাং মানবিক সহায়তা শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দিচ্ছে বিষয়টি তা না। এখানেও বাংলাদেশ একটি বড় অঙ্ক দিচ্ছে।’

রাজনৈতিক সমাধান সহজ নয়
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ মানবিক সহায়তায় অংশগ্রহণ করছে কিন্তু রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মানবিক সহায়তা দেওয়া সহজ। কিন্তু এর যে রাজনৈতিক সমাধান, সেটি সহজ নয়। তবে তারা শুধু মানবিক সহায়তা দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক সমাধান চায় না, সেটিও ঠিক না।’

নিরাপত্তা পরিষদে, সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য।’

চীনের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিফেন বিগেন অভিযোগ করেছেন, চীন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘চীনও চেষ্টা করছে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা যখন এগুচ্ছিল না, তখন চীন বলেছিল ত্রিপক্ষীয়ভাবে যদি কিছু করা যায়। যদিও এ বছর কোভিড বা অন্য যেকোনও কারণে এই উদ্যোগের তেমন একটি সফলতা দেখতে পারিনি। তবে আশা করি এটির একটি অগ্রগতি হবে।’

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীনকে বলেছি অনেক দিন ধরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয় না। শেষ বৈঠক হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। চীনের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বলেছি যে দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিপক্ষীয় ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া দরকার। কারণ, মনে হচ্ছে মিয়ানমার অজুহাত দেখিয়ে পাশ কাটাতে চাচ্ছে। এখন প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা আছে এবং এটি ভাঙার জন্য তাদের অনুরোধ করেছি।’