মুফিজুর রহমান :

পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পাখি ও পোকার আক্রমন থেকে ধানক্ষেত বাঁচাতে অভিনব পদ্ধতি গ্রহন করে সফল হয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী কৃষক আব্দু ছত্তার।

শনিবার সকালে সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের শাহ নুরুদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন পুরো ধানক্ষেতে সুতোয় ছোট ছোট সাদা পলিথিন টাঙ্গানো হয়েছে এবং সুতোর সাথে টিনের টাংকি বেঁধে দিয়েছেন। যেন পাখি ও পোকা থেকে তার ধানক্ষেত রক্ষা করা যায়। সাদা পলিথিন গুলো বাতাসে ধুলতে থাকলে বাবুই পাখি ধানক্ষেতে বসতে চায় না। এ ছাড়া বসলেও সুতোয় ঠান দিলে টাংকির শব্দে পাখি উড়ে চলে যায়। এ ধরনের পদ্ধতি গ্রহন করে সফল হয়েছেন কৃষক আব্দু ছত্তার। তার ধানক্ষেতে এখনো পর্যন্ত পোকার আক্রমন হয়নি এবং পাখিও খুব একটা বসে না।

কৃষক আব্দু ছত্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমন চাষাবাদের জন্য তিনি ৪ একর ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়েছেন। রোপন করেছেন ৫৬ ধানের বীজ। বর্গা নিতে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া ধানক্ষেত পরিপক্ক করতে গিয়ে তার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকারও অধিক। ধান মাড়াই পর্যন্ত আনুমানিক খরচ হবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মত।

তিনি আরো জানান, চলিত আমন চাষাবাদে পোকার আক্রমন অনেক কম হয়েছে। এ জন্য তিনি এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের কিটনাশক প্রয়োগ করেননি। তবে ছোট ছোট বাবুই পাখি গুলো ধান খেয়ে ফেলে বেশি। এ জন্য এ ধরনের অভিনব পদ্ধতি গ্রহন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক ভাবে কোন সমস্যা না হলে, এ বৎসর পর্যাপ্ত পরিমান ধান ঘরে উঠবে বলে জানায় ওই কৃষক।

কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান- প্রথম দিকে বাইশারী ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছি। বর্তমানে ধানক্ষেতের অবস্থা মুটোমুটি ভাল। প্রতি কানি ৭০ থেকে ৮০ আড়ি মত ধান পাওয়া যাবে। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন- বাইশারী বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ীদের দোকান থেকে নেওয়া বীজ ধান মানহীন হওয়ায় আমন ধানের ফলন একটু কমই হয়েছে।

আরেক কৃষক নুরুল হাকিম জানায়, ধানে বাবুই পাখির বিচরণ দেখে কৃষক আব্দু ছত্তার সুতোয় সাদা পলিথিন টাঙ্গিয়ে ও টিনের টাংকি পদ্ধতি গ্রহন করেছেন। এতে সুফলও পেয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, এ বছর পুরো উপজেলায় ৩ হাজার ৩শত ৩৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এনামুল হকের মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বাইশারী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল আলম জানান, পুরো উপজেলার মধ্যে সবার্ধিক ১ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদ হচ্ছে বাইশারীতে। এখানকার কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করে থাকেন। চলিত আমন মৌসুমে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমন হয়েছে, এখনো পর্যন্ত এ ধরনের কোন খবর পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকলে আমন মৌসুমে ভাল ফলন হবে বলে আশাবাদী তিনি। বাকীটা আল্লাহর মর্জি।