স্পোর্টস ডেস্ক:
গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট- কথাটি যে শুধু দলীয় পারফরম্যান্সের বেলায় সত্য, এমনটা নয়। বরং ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বেলায় এ কথার প্রমাণ মেলে আরও বেশি। কখনও কখনও বিশ্বের সেরা তারকারা ব্যর্থ হন চরমভাবে, আবার তাদেরকে ছাপিয়ে উদ্ভাসিত পারফরম্যান্সে ম্যাচ জিতে নেন আনকোরা কোনো খেলোয়াড়।

এর ব্যতিক্রম নয় অর্থের ঝনঝনানি থাকা টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটেও। প্রায়ই দেখা যায় কোটি-কোটি রুপির বিনিময়ে কেনা খেলোয়াড়রা তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন না। আবার ভিত্তিমূল্য অর্থাৎ ২০ লাখের অনেক খেলোয়াড়ও বাজিমাত করে জিতে নেন নানান পুরস্কার।

এখন চলছে আইপিএলের ১৩তম আসর। এরই মধ্যে হয়ে গেছে ৩২টি ম্যাচ। এবারের আসরে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অস্ট্রেলিয়ান পেসার প্যাট কামিনস। যাকে সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে কিনেছিল কলকাতা।

এছাড়া ১০ কোটি রুপির ওপরে থাকা অন্য দুই খেলোয়াড় হলেন অস্ট্রেলিয়ান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস মরিস। এবারের আইপিএলে সবচেয়ে দামি পাঁচ খেলোয়াড়ের তালিকায় বাকি দুজন হলেন ক্যারিবীয় পেসার শেলডন কটরেল ও অস্ট্রেলিয়ান পেসার নাথান কাউল্টার নাইল।

এখনও পর্যন্ত হওয়া ৩২ ম্যাচে কেমন করেছেন সবচেয়ে দামি এই খেলোয়াড়রা?- তা নিয়েই সাজানো এ প্রতিবেদন।

প্যাট কামিনস- কলকাতা নাইট রাইডার্স (সাড়ে ১৫ কোটি রুপি)
মূল পরিচয় বোলার হলেও এবারের আসরে যেনো ব্যাটসম্যান হিসেবেই তুলনামূলক ভালো করছেন প্যাট কামিনস। উচ্চাশা নিয়ে তাকে সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে কিনেছিল কলকাতা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারেননি কামিনস। টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচে ৩ ওভারে খরচ করেছিলন ৪৯ রান।

এখনও পর্যন্ত ২৯ ওভার বোলিং করে মাত্র ২ উইকেট নিতে পেরেছেন কামিনস, ওভারপ্রতি ৮.৬২ গড়ে রান খরচ করেছেন ২৫০। যা কি না তার দামের সঙ্গে পুরোপুরি বেমানান। তবে ব্যাট হাতে আবার ৮ ম্যাচে করেছেন ১২৬ রান। যা কি না কলকাতার তিন তারকা দীনেশ কার্তিক, নিতিশ রানা ও আন্দ্রে রাসেলের চেয়ে বেশি।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল- কিংস এলেভেন পাঞ্জাব (১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপি)
আইপিএলে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার নাম বলা যায় গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। তাকে কিনতে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ হয়েছে পাঞ্জাবের। কিন্তু এই মূল্যের কানাকড়ির সমানও পারফরম্যান্স করতে পারেননি ম্যাক্সওয়েল। এখনও পর্যন্ত আসরে ৬১ বল খেলে রান করেছেন মাত্র ৫৮। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে নামডাক থাকলেও, এখনও কোনো ছক্কা হাঁকাতে পারেননি তিনি। বল হাতে ১১ ওভারে মাত্র ১ উইকেট শিকার করেছেন ম্যাক্সওয়েল।

ক্রিস মরিস- রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (১০ কোটি রুপি)
সবাইকে অবাক করে দিয়ে আইপিএলের নিলামের সময় ১০ কোটি রুপির বিনিময়ে ক্রিস মরিসকে দলে ভেড়ায় ব্যাঙ্গালুরু। একজন ভালো মানের অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হলেও, এতো বেশি মূল্যের কথা কেউ কখনও কল্পনাও করেনি। কিন্তু মাঠের খেলায় মরিসও এখনও পর্যন্ত নিজের দামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

ব্যাঙ্গালুরু এখনও পর্যন্ত খেলেছে ৮টি ম্যাচ, যেখানে মরিস খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩টিতে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন মরিস, পরে কলকাতার বিপক্ষে নেন আরও দুইটি। তবে পাঞ্জাবের বিপক্ষে উইকেটশূন্যই থেকে যান তিনি। কাঁধের ব্যথার কারণে প্রথম দিকের ম্যাচগুলো খেলতে পারেননি মরিস।

শেলডন কটরেল- কিংস এলেভেন পাঞ্জাব (সাড়ে ৮ কোটি রুপি)
কিংস এলেভেন পাঞ্জাবের আরেক হতাশার নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি পেসার শেলডন কটরেল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কার্যকারিতা বিবেচনা তাকে চড়া মূল্যে দলে নিয়েছিল পাঞ্জাব। কিন্তু ছয় ম্যাচে মাত্র ৬টি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন কটরেল। এরপর জায়গা হারিয়েছেন দল থেকে। এ ছয় ম্যাচে ১৭৬ রান খরচ করেছেন কটরেল। যেখানে ছিলো রাহুল তেওয়াতিয়ার বিপক্ষে এক ওভারে ৩০ রান হজম করা ওভারটিও।

নাথান কাউল্টার নাইল- মুম্বাই ইন্ডিয়ানস (৮ কোটি রুপি)
একদম প্রথম ম্যাচ থেকেই নাথান কাউল্টার নাইলকে পাওয়ার আশায় ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাওয়া ইনজুরিতে প্রথম ৭ ম্যাচ খেলতেই পারেননি এ অস্ট্রেলিয়ার পেসার। অষ্টম ম্যাচে সুযোগ পেলেও বোলিং করেছেন যাচ্ছেতাই। তার ৪ ওভার থেকে ৫১ রান তুলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এমন বোলিংয়ের পর পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন কি না, এটিও এখন বড় প্রশ্ন।