সিবিএন ডেস্ক:

অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ঢাকার বস্তিগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে ইতোমধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে, ঢাকার বস্তিগুলোর ৭৪ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর তাদের শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যারা ইতোমধ্যে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন।

দেশে প্রথম করোনার সেরোসার্ভিলেন্স নিয়ে করা এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) যৌথভাবে এই গবেষণা করে।

তাহলে কি বাংলাদেশ করোনার হার্ড ইমিউনিটির দিকে হাঁটছে? এমন প্রশ্ন উঠেছে। যদিও করোনার সংক্রমণ বস্তিতে কম, কিন্তু গবেষণা বলছে ৭৪ শতাংশ বস্তিবাসীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পুরো দেশে না হলেও বস্তিতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, হার্ড ইমিউনিটি সংক্রামক রোগ থেকে এক ধরনের পরোক্ষ সুরক্ষা। এটি তখনই তৈরি হয় যখন একটি জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক ডা. ফেরদৌস কাদরি বলেন, ‘ঢাকার মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার এনকারেজিং। আর সেটা হার্ড ইমিউনিটির শুরুর ইঙ্গিত দেয়। সেরোপ্রিভেলেন্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে করোনার প্রিভেলেন্স রেট মেশানো যাবে না। করোনার প্রিভেলেন্স রেট আরও বেশি হতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেরোপ্রিভেলেন্স রেট ব্যবহার করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কখন আসবে তা ধারণা করা যায়নি। অ্যান্টিবডিগুলো খুব কম সময়ের জন্য অবস্থান করে এবং আমরা কিছু কিছু মানুষের দ্বিতীয়বারের মতো সংক্রমণের তথ্যও পেয়েছি।’

অনুষ্ঠানে অন্য একটি সমীক্ষার তথ্য থেকে দেখা যায় যে ঢাকার ৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু বস্তিতে সংক্রমণের হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। বস্তির মানুষের মধ্যে এত বেশি পরিমাণে অ্যান্টিবডি এবং সংক্রমণের হার কম হওয়ার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের বেশিরভাগই লক্ষণ উপসর্গহীন। কিন্তু তাতে বলা যাবে না যে কম সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে এ নিয়ে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘যে সেরো পজিটিভিটি দেখছি সেটা নিয়ে আরও বিস্তৃত আকারে গবেষণা করতে হবে। যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা তা দিয়ে আসলে কোনও সিদ্ধান্তে আসা কষ্টসাধ্য। খুব দ্রুতই বস্তি এলাকায় এই কাজ শুরু করছি। জাতীয় পর্যায়ে সকল জেলা থেকে আমাদের যে তথ্য সংগ্রহ হয়েছে সেটা যখন বর্তমানের সঙ্গে মেলাবো তখন একটা জাতীয় পর্যায়ের জন্য ফিগার দাঁড় করাতে পারবো। আজ যে গবেষণা ফলাফল জানানো হয়েছে এটা প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য, যেখানে খুব অল্প সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। এটা দিয়ে বাংলাদেশ হার্ড ইমিউনিটির পথে হাঁটছে কিনা সে সিদ্ধান্তে আসা খুব কঠিন হবে।’
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যখন কোনও জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয় তখন সেখানে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। যেহেতু ৭৪ শতাংশ অ্যান্টিবডি বস্তিতে পাওয়া গেছে, তাহলে সেখানে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। যদিও বস্তিতে সংক্রমণের হার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। তবে এখানে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হার্ড ইমিউনিটির সুবিধা হচ্ছে কোথাও যদি এটি তৈরি হয়ে যায় তাহলে সেখানে সংক্রমিত ব্যক্তি গেলেও সংক্রমণের মাত্রা বাড়ে না। এখন যদি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বস্তিতে যায় তাহলে সেখানে সংক্রমের হার বাড়বে না।’

আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বস্তির জনসংখ্যা কম বেশি হয়, কিন্তু যারা আছে তাদের মধ্যে যদি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে তাহলে বস্তিতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। যেহেতু বস্তিতে পিসিআর টেস্ট কম হয় সেজন্য সংক্রমণও কম। অ্যান্টিবডি একজন ব্যক্তির শরীরে তিন মাস পর্যন্ত থাকে। যদি এই সমীক্ষা জুলাইতে করা হয়ে থাকে তাহলে এখনও অ্যান্টিবডির উপস্থিতি আছে। তিন মাসের গবেষণার পর সেখানে আবারও গবেষণা করে দেখতে হবে অ্যান্টিবডি আছে কিনা।’

উল্লেখ্য, ঢাকার থেকেও কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে ভারতের মুম্বাইয়ের বস্তিতে। চিম্বুর, মাতুঙ্গা এবং দাইসার এই তিনটি বস্তিতে সমীক্ষা করে দেখা গেছে মাত্র ৫৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে সার্স কোভ-২-এর বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় অন্তত ১৫ লাখের মতো মানুষ বাস করে। দেশে জুলাইয়ের প্রথম দিকে ৭ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখান থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছাতে সুইডেন ব্যর্থ হয়। একমাত্র সুইডেনই করোনার বিস্তার করতে দেয় হার্ড ইমিউনিটি তৈরির জন্য। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। সুইডিশ সরকার ধারণা করেছিল, স্টকহোমের ৪০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে এবং মে মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। কিন্তু আগস্টের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১৫ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হয়েছে।