সিবিএন ডেস্ক:
কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন ছুটিতে এসে আটকে পড়া ইতালি প্রবাসীরা। ৮-১০ মাস ধরে আটকে পড়ায় অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে। আয়হীন সময় কাটিয়ে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ইতালির। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো নিয়েও কোনও ঘোষণা দেয়নি দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত ইতালি প্রবাসীরা তিন দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন। রবিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকায় ইতালির দূতাবাসের সামনে মানববন্ধনের মধ্যদিয়ে আন্দোলন শুরু হবে তাদের।

ইতালি প্রবাসীরা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে প্রথমে ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেবেন তারা। সেখানে মানববন্ধন শেষ করে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। মানবন্ধনে থেকে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করা হবে বাংলাদেশ ও ইতালি সরকারের কাছে। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে— যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করা, বাংলাদেশ থেকে ইতালির ফ্লাইট চালু করা, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতালি প্রবাসীদের সহায়তা করা।

আটকে পড়া ইতালি প্রবাসীদের একজন হৃদয় আহমেদ। ১০ বছর ধরে তিনি ইতালিতে আছেন। করোনাভাইরাসের মহামরির মধ্যে দেশে এসে আটকা পড়েছেন ৯ মাস ধরে। হৃদয় আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ইতালিতে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম। দুই মাসের জন্য ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলাম। অথচ আজকে ৯ মাস পার হয়ে গেছে। সেখানে আমার বাসা ভাড়া অন্যান্য খরচ ঠিকই দিতে হবে, অথচ আমার কোনও আয় নেই এখন। এখন যদি দ্রুত ফিরে না যেতে পারি, তবে কাজও হারাতে হবে। এখন আমাদের জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস এখনও পাইনি।’

ইতালি প্রবাসীরা জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তি ইতালির নাগরিকত্ব পেলে পরিবারের জন্য তিনি ফ্যামেলি ভিসা পাবেন। অনেকের ফ্যামেলি ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে তাদের ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। অথচ সেখানে (ইতালিতে) তাদের পরিবারের সবকিছু পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

জানা গেছে, ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করে আইইডিসিআর। সংস্থাটি জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন ইতালি ফেরত। তাদের একজন নারী, যিনি ইতালি ফেরত একজনের পরবারের সদস্য। দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিন না মানার প্রবণতা ছিল প্রবাসীদের, এর মধ্যে ইতালি প্রবাসীরাও ছিলেন। অন্যদিকে যারা ইতালিতে ফিরে গেছেন, তাদের অনেকেই সেদেশের স্বাস্থ্যবিধি ও কোয়ারারেন্টিন মানেননি বলেও দেশটির সংবাদপত্রে খবরে প্রকাশ হয়।

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মার্চে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখে। তবে সে সময়ে ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় বেশকিছু চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফেরেন ইতালি প্রবাসীরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকেও চার্টার্ড ফ্লাইটে ইতালিতে ফেরেন অনেকেই। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নীতিমালা অনুসরণ করে ১৬ জুন থেকে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে কাতার এয়ারওয়েজ কাতার হয়ে বিভিন্ন দেশে যাত্রীদের নিয়ে যায়। এরমধ্যে অন্যতম গন্তব্য ছিল ইতালি। ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে রোমে যাওয়া একটি ফ্লাইটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। এ ঘোষণার পরও ৮ জুন বাংলাদেশ থেকে কাতার হয়ে ইতালিতে যাওয়া দুটি ফ্লাইটের ১৬৮ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দিয়েছে দেশটি।

ইতালি প্রবাসীদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ইতালি দূতাবাসে যোগাযোগ করেও কোনও তথ্য পাচ্ছেন না তারা। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, কবে বাড়াবে এ বিষয়ে ইতালি দূতাবাস সিদ্ধান্ত দেয়নি। ইতালিতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকার দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু দূতাবাসে যোগাযোগ করলে একেক সময় একেক জন ফোন রিসিভ করেন এবং একেক জন একেক ধরনের উওর দেন। ইতালির ভিসা সেন্টার ভিএফএস গ্লোভালও কোনও তথ্য দিতে পারছে না।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ইতালি প্রবাসী হৃদয় আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৮ জুলাই আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি, কোনও আশ্বাস পাইনি। এ জন্য আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে লড়বো। সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে আমরা মাঠ থেকে সরে যাবো না। কারণ, এটা আমাদের জীবনজীবিকার প্রশ্ন।’

ইতালিতে পড়াশোনা করতেন হাসনাত উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ৮ মাস ধরে আটকে আছি। আমার পড়াশোনা কিছুই হচ্ছে না। এখন ফিরে যেতে না পারলে আমরা ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারত, ফ্রান্স, পাকিস্তানের করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভালো না, অথচ সেসব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ হয়নি ইতালিতে।’

১৫ দিন আগে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে মো. রুহুল আমিন তালুকদারের। ইতালিতে ব্যবসা করতেন। ১১ মাস ধরে দেশে আছেন তিনি। রুহুল আমিন বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে— এখন আমাদের করণীয় কী বুঝতে পারছি না। করোনার এ সময়ে দেশে আটকে আছি, কেউ তো খোঁজও ‍নিতে আসেনি। এখনও আমাদের কাজে ফিরে যেতে কোনও তৎপরতা দেখছি না। এখানে একজন ব্যক্তি শুধু ব্যক্তি নয়, একটি পরিবার। তাকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো মানুষের জীবন চলে। আমরা যদি ফিরে যেতে না পারি, তবে পুরো পরিবার বিপদগ্রস্ত হবে।’