সিবিএন ডেস্ক:
উহানে করোনা ছড়ানোর খবর বিশ্বে প্রচার হওয়ার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে দাবি করেছে চীন।

চীন দাবি করেছে, সে দেশ থেকে ছড়ায়নি বিশ্বব্যাপী মহামারির রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনা ছড়ানোর খবর বিশ্বে প্রচার হওয়ার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল। তাই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীন কোনোভাবেই দায়ী নয়। এমন দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনাইং।

বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার হুয়া চুনাইং দাবি করেছেন, চীনের ওপর দোষ চাপাচ্ছে সারা বিশ্ব। অথচ করোনার সংক্রমণ উহান থেকে ছড়ায়নি। হুয়ার বক্তব্য, উহান যখন করোনাভাইরাসের খবর দিয়েছিল, এর অনেক আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের নানা জায়গায়। চীন বরং করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে সঠিক খবর বিশ্বের সামনে এনেছিল। সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনাইং সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘করোনাভাইরাস নতুন ধরনের একটি ভাইরাস।’ হুয়া চুনাইংয়ের দাবি, ‘গত বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল।’ নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বা জিনের গঠন বিন্যাস পরীক্ষা করে এমনটাই জানা গেছে বলে দাবি করেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

হুয়া চুনাইংয়ের বলেন, ‘চীন সর্বপ্রথম এই মহামারির কথা ঘোষণা করে। প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে এর জিনোম ক্রম সারা বিশ্বের সঙ্গে ভাগাভাগি করে।’

এ ছাড়া হুয়া চুনাইংয়ের দাবি, করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করে বোঝা গেছে, উহান থেকে এই ভাইরাল স্ট্রেইন ছড়ায়নি। এমন ভাইরাল স্ট্রেইন আগেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়েছিল। হুয়া চুনাইং বলেছেন, চীন সবচেয়ে আগে করোনাভাইরাসের জিনের গঠন সামনে এনেছিল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে করোনাভাইরাস চীন থেকেই ছড়িয়েছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দাবি নাকচ করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া বলেছেন, উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর খবর রটেছে। কিন্তু সেটি একেবারেই ঠিক নয়। তাঁর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে এই ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, চীনের ‘ওয়েট মার্কেট’ বা কাঁচা মাংসের বাজার থেকে করোনাভাইরাস বাদুড় ও বনরুইয়ের মাধ্যমে বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। এ তথ্যও ভুল বলে দাবি করেছেন হুয়া চুনাইং।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে এসেছে যে করোনাভাইরাস উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ভাইরাস নয়, রাসায়নিক মারণাস্ত্র, এমন কথাও উঠেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল দাবি করেছিল, করোনার সংক্রমণ যখন চীনে মহামারির পর্যায়ে যাচ্ছিল, সে তথ্য সঠিকভাবে আন্তর্জাতিক মহলকে জানায়নি চীন; বরং মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুরো বিষয়টিই হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপদেষ্টাদের দাবি, এই করোনাভাইরাসের চক্রান্ত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির।

করোনাভাইরাস যে উহান থেকেই ছড়িয়েছে, এমন দাবি করেছিলেন উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সংক্রামক রোগ বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছিলেন, ২০১৩ সালে করোনাভাইরাসের মতোই সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল বায়োসেফটি লেভেল-৩ ল্যাবরেটরিতে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি পরিত্যক্ত খনিতে বাদুড়ের মলমূত্র, মৃত বাদুড়ের ছড়িয়ে-ছটিয়ে থাকা দেহ পরিষ্কার করতে গিয়ে ছয়জন খনি শ্রমিক অজানা সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁদের নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। ওই ছয়জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই খনি থেকে পরে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে। সেখানে গবেষকেরা করোনার মতোই ভাইরাল স্ট্রেইনের (আরএটিজি১৩) খোঁজ পান এবং তা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। করোনার সঙ্গে সেই ‘আরএটিজি১৩’ ভাইরাল স্ট্রেইনের ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মিল ছিল। এই ভাইরাল স্ট্রেইনেরই জিনের গঠন বদলেছে কিনা কিংবা বদলানো হয়েছে কিনা, তা নিয়েই এখন আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির পরিচালক দাবি করেছেন, ‘আরএটিজি১৩’-এর মতো কোনো ভাইরাল স্ট্রেইনের কপিই নেই তাঁদের ল্যাবে। তাই এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।