ইমাম খাইর#
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মাঠে না থাকলেও এবার কমিটি নিয়ে সরব হয়েছে ছাত্রদলের পদ বঞ্চিতরা। করছে মিছিল-মিটিং ও প্রতিবাদ সভা। যাদের নিয়ে নতুুুন কমিটি তাদের বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততাসহ নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর কক্সবাজার জেলার আওতাধীন ১৮টি শাখা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এসব কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
টাকার বিনিময় ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিবাহিত, ইয়াবা ব্যবসায়ী, অছাত্র ও আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকাহীন লোকজনকে কমিটিতে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।
সদ্য ঘোষিত কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন সকল ইউনিটের কমিটির প্রতি ক্ষোভ ও অনাস্থা জানিয়েছে পদবঞ্চিতরা।
তাদের দাবী, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে।
সম্প্রতি ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের ১৮টি শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে ৯০ শতাংশ বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিল না। কোন সময় পার্টি অফিসে দেখা যায়নি এমন লোককেও কমিটিতে রাখা হয়েছে, দাবী পদ বঞ্চিতদের।
তারা আরও অভিযোগ করেছে, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুল আলম তাদের পকেট ভারী করার জন্য কমিটি নিয়ে নয়-ছয় করেছেন। আহ্বায়ক কমিটির অনেকেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
গত ৭ অক্টোবর কক্সবাজার শহর শাখা, সদর উপজেলা শাখা, সরকারি কলেজ শাখা, কক্সবাজার সিটি কলেজ শাখা, রামু কলেজ শাখা, মহিলা কলেজ শাখা, ঈদগাঁও ফরিদ আহমেদ ডিগ্রি কলেজ শাখা, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি শাখা, কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, উখিয়া উপজেলা, টেকনাফ উপজেলা, টেকনাফ পৌরসভা, উখিয়া কলেজ, টেকনাফ সরকারি কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
ক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, কমিটি গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদ সিন্ডিকেটের নেতারা বাগিয়ে নেয়ায় বাদ পড়েছেন অনেক কর্মীবান্ধব, ত্যাগী, পরিশ্রমী ও নির্যাতিত নেতা। অনেকের ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
যদিও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পাবেন যোগ্য ও বঞ্চিতরা। যাদের কোন যোগ্যতাই নেই, তারা কমিটিতে থাকলে ছাত্রদল প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
শহর ছাত্রদল নেতা ওসমান সরওয়ার টিপু বলেন, ‘যারা শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে থেকে নির্যাতন, মামলা ও হামলার শিকার হয়ে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে তাদের মূল্যায়ন না করে নতুন মুখ অযোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
শহর শাখা কমিটিতে হুমায়ুম কবির হিমু নামে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তার রাজপথে কোন চিহ্ন নেই। যাদের পদবঞ্চিত করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই মামলা-হামলার আসামি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যাদের কমিটিতে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে দুয়েকজন ছাড়া বাকি কারোরই রাজপথে পায়ের ছাপও নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে ভুল বুঝিয়ে টাকার বিনিময়ে কমিটি নিয়ে নয়-ছয় করা হয়েছে। দ্রুত কমিটিগুলো বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
পদ বঞ্চিত নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৬ বছর ধরে ছাত্রদলের সাথে যুক্ত। রাজপথের প্রতিটি মিছিল সংগ্রামে ছিলাম। কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে কাউসার হাবিব ত্বকী নামে একজনকে। সে ছিল শহরের একটি ইউনিট কমিটির কর্মী। সরকারি কলেজের মিছিল মিটিংয়ে তাকে কখনো দেখা যায়নি। সে সরকারি কলেজের ছাত্র কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একইভাবে কমিটিতে রাখা কেউই ছাত্রদলের ডেডিকেটেট কর্মী নয়। এই কমিটি আমরা বাতিল চাই।’
হোসাইন মাদু বলেন, ‘কক্সবাজার শহর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে দুয়েকজন ছাড়া বাকিরা সবাই অপরিচিত। তাদের শহর কমিটিতে আসার যোগ্যতা নেই। স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। শহর শাখার মত পুরো ১৮ কমিটিরই একই অবস্থা। এসবের মূল নায়ক হচ্ছে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমান নয়ন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুল আলম। এই বৈষ্যমের কারণে প্রকৃত জিয়ার সৈনিকেরা মর্মাহত। দ্রুত এই কমিটি বাতিল চাই।’
বঞ্চিতদের দাবি, কক্সবাজার শহর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে মো. কায়সারকে। তিনি একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী।
এদিকে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে বিতর্কিত দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কক্সবাজার শহরের ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় কক্সবাজার শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদ স্মরণিস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে পৌঁছে শেষ হয়। ঘোষিত কমিটি বাতিল করে যোগ্যদের স্থান দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
কমিটি বাতিলের দাবিতে টেকনাফ পৌর  ছাত্রদলের এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দাবিতে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে টেকনাফে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল।
উপজেলার বাস টার্মিনাল থেকে এ বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পথসভায় মিলিত হন।
এতে বক্তব্য রাখেন- টেকনাফ পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. তাওহীদ আরমানী, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান মুন্না, রহমত উল্লাহ, সেনায়েত উল্লাহ, তারেক আহমদ সাগর, শাহরাত কামালসহ ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকালে টেকনাফের হ্নীলায় একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল।
এ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান নয়ন বলেন, কমিটি গঠনের আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময়ে যারা ফরম জমা দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে উপযুক্তরাই কমিটিতে স্থান পেয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সংসদ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের তত্ত্বাবধানে কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে। সেখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোন প্রভাব নাই।
বিগত কমিটির শাহাদাত হোসেন রিপন ও ফাহিমুর রহমান ফাহিমের ইন্ধনে এসব হচ্ছে বলে দাবি নয়নের।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফাহিমুর রহমান ফাহিম বলেন, ছাত্রদল করার অপরাধে মামলা খেয়েছে; জেল খেটেছে, এমন ত্যাগিদের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এসব করছে৷ সেখানে আমাদের ইন্দন দেয়ার কি আছে?
তিনি আরও বলেন, পদ-পদবীতে যারা আসবে তারা সবাই আমাদের ভাই। দলে যোগ্য নেতৃত্বে আসুক আমরা চাই। তবে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়।