সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের ৭০০ নাগরিক সংগঠনের প্লাটফরম বিডিসিএসওপ্রসেস-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের ২য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যার শিরোনাম ছিল “অংশিদারিত্ব এবং স্থায়িত্বশীল স্থানীয় সংগঠন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া”। প্রায় ২৫০ জন ব্যক্তির অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এই অনলাইন সম্মেলনে অংশ নেন ২০ জন বিদেশি ও আমন্ত্রিত অতিথি। নারীপক্ষের শিরীন হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনপি সঞ্চালনা করেন বিডিসিএসওপ্রসেসের জাতীয় সমন্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরী।

এই অধিবেশন থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশিদারিত্বের চলমান চর্চার মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ঔপনিবেশিক মনোভাবের আধিপত্য পরিহার করার দাবি তোলা হয়। অধিবেশনে আরো বলা হয়, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সংগঠন পরিপূরকতা ও সকলের অংশগ্রহনে বিশ্বাস করে যার জন্য প্রয়োজন সমতাভিত্তিক ও সহমর্মী আচরণ।

অধিবেশনের বক্তারা হলেন, মি. ইগনাসিও প্যাকার, আইসিভিএ, সুইজারল্যান্ড; মিস নানেত্তে এনটিকুইসা, ইকোওয়েব এবং এফোরইপি, ফিলিপাইন; মি. হাওয়ার্ড মোলেট, চার্টার ফর চেন্ড ও ক্যাফোড যুক্তরাষ্ট্র; মি. রাজন ঘিমিরে, মালটেজার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ; এডাবের একেএম জসিম উদ্দিন; পপি এবং সিডিএফ’র মোরশেদ আলম সরকার; এনআরডিএস এবং সুপ্র’র আব্দুল আউয়াল; উদয়ন বাংলাদেশের শেখ আসাদ, খুলনা; মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, আরপিএস, রংপুর; সাইদা ইয়াসমিন, কুড়িগ্রাম; শিউলি শর্মা, জাগো নারী, কক্সবাজার এবং রাজকুমার সাঁও, রাজশাহী।

নারীপক্ষের শিরীন হক সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ঔপনিবেশিকতা ইতিহাসের অনেক পুরোন বিষয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এর চর্চা এখনও রয়ে গেছে, বিশেষ করে এনজিওদের সাথে বিদেশি সংস্থার অংশিদারিত্ব স্থাপনের সময় এটা দেখা যায়। এটি পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও একই ধরনের নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। ছোট সংগঠনের সাথে কাজ করতে গেলে তাকে নির্বাহী ব্যয় প্রদান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মুখে বলা হলেও বাস্তবে এখনও নারী প্রধান সংগঠনসমূহ এখনও নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার।

অধিবেশনের প্রধান অতিথি, আইসিভিএ’র মি. ইগনাসিও প্যাকার ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত অংশিদারিত্বের নীতিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘের এজেন্সি থেকে শুরু করে এনজিও সকলকেই পরষ্পরের পরিপূরকতা ও অংশগ্রহনমূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সহমর্মী ও সমতাভিত্তিক অংশিদারিত্ব।

ক্যাফোডের মি. হাওয়ার্ড মোলেট অংশিদারিত্বের মধ্যে ঝূঁকি ভাগাভাগি করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বা আরলি ওয়ার্নিং পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে পারে স্থানীয় সংগঠন।

নানেত্তে এনটিকুইসা বলেন, উপর থেকে নিচের দিকে বলেন বা নিচ থেকে উপরের দিকে, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা সব কাজেই থাকতে হবে। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত সংগঠনই জবাবদিহি করবে এটা ঠিক নয়।

মি. রাজন ঘিমিরে তার বক্তব্যে বলেন, প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেই অংশিদারিত্ব শেষ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। স্থানীয় সংগঠনের স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা গেলেই আসলে প্রকল্পের ফল নিশ্চিত করা সম্ভব।

এডাবের একেএম জসিম উদ্দিন বলেন, এনজিওসমূহের সাম্প্রতিক করপোরেট হবার মনোভাব মানুষকেন্দ্রিক নাগরিক সংগঠনের গড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত করে। মানবাধিকার ও উন্নয়নের জন্য ছোট ছোট স্থানীয় সংগঠনের যে চেতনা সেটাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

সুপ্র’র আবদুল আউয়াল বলেন, যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি ইতিমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে সেগুলোর মাপকাঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ উৎড়ে যায় কি না সেটাও এখন যাচাই করে দেখার সময় এসেছে। শুধু ছোট সংগঠনই মানদণ্ডের পরীক্ষা কেন দেবে? তিনি এ প্রসঙ্গে এসডিজি লক্ষ্যসমূহের শ্লোগান “পেছনে পড়ে থাকবে না কেউ” কথাটি মনে রাখার আহ্বান জানান।

মোরশেদ আলম সরকার তার বক্তব্যে বলেন, ৪০ বছর একসাথে কাজ করার পরও যদি জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ স্থানীয় সংগঠনের সামর্থের প্রশ্ন তোলে, তাহলে এটা তাদেরই ব্যর্থতা। কারণ এই সামর্থ উন্নয়নে তারাই এতদিন কাজ করেছে। স্থানীয় সংগঠনই সেখানকার ভাষা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানে। তিনি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে যারা অধিকার ভিত্তিক এপ্রোচ নিয়ে কাজ করে তাদের অর্থায়নের আহ্বান জানান।