ডেস্ক নিউজ:
আজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এক বছর পূর্ণ হলো। আবরার ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে শিবির সন্দেহে বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলের নিজ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ছয় ঘণ্টা নির্যাতন ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় আবরারকে। সন্তান নির্মম হত্যার শিকার হওয়ার পর প্রতিটি দিন দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটছে আবরারের বাবা-মার। এক বছরেও সন্তান হারানোর শোক সহ্য করতে পারছেন না তারা।

সন্তানের কথা স্মরণ করে বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘এই এক বছরে প্রতিটি মুহূর্তে ছেলে হারানোর কথা মনে করে প্রতিটি দিন কাঁদে তার মা। প্রতিটি রাতে কান্নাকাটি করে ঘুমায়। এমন কোনও দিন নেই কাঁদে না তার মা। ছেলের শোকে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আবরারের মা বলেন, “আজ আমার ছেলে বেঁচে থাকলে এ সময় আমার কাছে থাকতো। করোনায় তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তাকে আমি পছন্দমতো রান্না করে খাওয়াতে পারতাম।” নানান কথা মনে করে প্রতিটি মুহূর্তে ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে।’

আবরারের বাবা আরও বলেন, ‘আসামিরা আমার ছেলেকে ছয় ঘণ্টা ধরে আমানবিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে। সভ্য জগতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনাটি আদিম যুগের বর্বরতার মতো। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এরকম ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করি।’

পরিবারে আবরারের ছোট একটি ভাই আছে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করেন। আবরারের বাবা একটি এনজিওতে চাকরি করেন বলে জানান।

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার হত্যার পরের দিনই এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রের ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছে ৩ জন। গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এজাহারে থাকা আসামিরা হলো–মেহেদী হাসান রাসেল, অনীক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।

এজাহারবহির্ভূত ৬ জন হলো– ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন আসামি হলো–মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আলোচিত এ মামলাটির সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। বর্তমানে এ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে। -বাংলা ট্রিবিউন।