বিবিসি বাংলা : তিন রাত হাসপাতালে কাটিয়ে নাটকীয়ভাবে হোয়াইট হাউজে ফিরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের মাস্ক খুলে ফেলেন, যেখানে সম্প্রতি অনেক কর্মকর্তা এবং উপদেষ্টা কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।

এর আগে মি. ট্রাম্প টুইটে বলেছিলেন “বেশ ভাল বোধ হচ্ছে।”

“কোভিডকে ভয় পাবেন না। এটাকে আপনাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে দেবেন না।”

যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৭৪ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

সপ্তাহান্ত জুড়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য সম্বলিত বিবৃতি প্রকাশের পর মি. ট্রাম্পের অসুস্থতা নিয়ে গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।

ট্রাম্পের ফিরে আসার সময় কী হলো?
সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল ছাড়ার আগে আমেরিকানদেরকে এই রোগ নিয়ে ভীত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে টুইট করেন ট্রাম্প। আর হাসপাতাল ছাড়ার পর তিনি বলেন: “২০ বছর আগে যেমনটা বোধ করতাম এখন তার চেয়ে অনেক ভাল অনুভব করছি।”

টুইটেও তিনি বলেন: “শিগগিরই প্রচারণায় ফিরবো।”

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার লড়াইয়ের মাস খানেক আগে তার এই চিকিৎসা তার প্রচারণায় বেশ ভাল রকমেরই প্রভাব ফেলেছে। হোয়াইট হাউজের এই নির্বাচনের তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন।

নীল রঙের স্যুট, টাই এবং মাস্ক পরে ওয়াশিংটনের ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসেন মি. ট্রাম্প। সেসময় বার বার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করছিলেন এবং খুলছিলেন তিনি।

সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।” সেসময় এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, “মি. প্রেসিডেন্ট আপনি কি একজন সুপার সংক্রমণ বিস্তারকারী?” তবে সে প্রশ্নও এড়িয়ে যান তিনি।

এরপর হেলিকপ্টারে করে হোয়াইট হাউজে এসে পৌঁছান মি. ট্রাম্প। এর পরে তোলা ছবিতে তাকে হোয়াইট হাউজের ট্রুম্যান ব্যালকনিতে দেখা যায়। সেখানে থাম্বস-আপ এবং সামরিক স্টাইলে স্যালুট দেয়ার আগে নিজের মাস্ক খুলে ফেলেন তিনি।

এর কয়েক ঘণ্টা পর এক টুইটে নিজের ফিরে আসার ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন তিনি।

আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে মি. ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তাও রেকর্ড করেন যেখানে তিনি সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

“আপনারা একে পরাজিত করতে যাচ্ছেন,” তিনি তাদের বলেন।

“আমাদের সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে, সবচেয়ে ভাল ওষুধ রয়েছে। এ সব কিছুই সম্প্রতি উন্নয়ন করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন: “আমরা অগ্রগামী হবো। আপনাদের নেতা হিসেবে আমাকে সেটা করতেই হবে। আমি জানি যে এতে বিপদের ঝুঁকিও রয়েছে, কিন্তু এটা আমাকে করতেই হবে। আমি সামনে এগিয়ে যাবো এবং নেতৃত্ব দেবো।”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে: “এখন আমি ভাল আছি। হয়তো আমি রোগটি থেকে নিরাপদ, আমি আসলে জানি না।”

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, প্রতিষেধক আসাটা এখন “সময়ের ব্যাপার মাত্র,” যদিও মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলেছে যে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে আগে কোন প্রতিষেধক আসবে না।

চিকিৎসকরা কী বলছেন?
হোয়াইট হাউজের চিকিৎসক নেভি ক্যাডার শন কনলি সোমবার বিকেলে বলেন যে, মি. ট্রাম্প “হয়তো এখনো ঝুঁকি মুক্ত নন।”

কিন্তু তিনি বলেন যে, প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং উন্নতি “তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য উপযোগী যেখানে তিনি সব সময় বিশ্বমানের চিকিৎসা পাবেন।”

কিন্তু মি. ট্রাম্প সবশেষ কবে কোভিড নেগেটিভ পরীক্ষা করিয়েছেন কিংবা তার চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত কোন কিছু নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি ডা. কনলি। রোগীর গোপনীয়তা সুরক্ষার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্টের নিউমোনিয়ার জন্য স্ক্যান নিয়েও বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

হোয়াইট হাউজের চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে মি. ট্রাম্প স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসেন এবং দিনে তিন বার করে রেমডিসিভির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করছেন।

মি. ট্রাম্প নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর জন্য ভ্রমণ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে ডা. কনলি বলেন: “আমরা দেখবো।”

কিন্তু সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে মি. ট্রাম্পের চিকিৎসক দল বার বারই গুরুত্বারোপ করেছে যে মি. ট্রাম্প বেশ ভাল করছেন।