শাহ্‌ মুহাম্মদ রুবেল,কক্সবাজার :

‘এই বছর না সেই বছর, মানুষ বাঁচে কয় বছর। আর কয় দিন না বাচবো, কখন যে পরপারের ডাক আসে জানি না। বয়সতো ৭০ পার হয়ে গেছে আরো কয়েক বছর আগেই। শুনছি ৬২ বছর হলে নাকি নারীদের বয়স্ক ভাতা দেয়। আমিতো বাজান এখনও কিছুই পাইলাম না’ মনের দুঃখে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন আমিনা খাতুন।

কক্সবাজার শহরের সৈকত পাড়া (১২ ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা আমিনা খাতুন।

এই বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। শুধু আশ্বাসই মেলে, এ বছর না আগামী বছর। তারপর বলে পরের বছর আসেন। এভাবে কয়েক বছর ঘুরেও কেউ তার জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২ আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী আমিনা খাতুন বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। বয়স ৭০ পেরিয়ে ৭১ ছুঁই ছুঁই। তারপরও বিধবা আমিনা খাতুন পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড। স্বামীহারা আমিনা খাতুন এই বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে নানা সংকটে ভুগছেন। বয়সের ভারে রোগেশোকে তিনি ভারাক্রান্ত। চিকিৎসা তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তার জন্য কষ্টকর।

এলাকাবাসীরা জানান, ৩৫ বছর আগে বিনা চিকিৎসায় আমিনা খাতুনের স্বামী মোঃ হামিদ মৃতুবরণ করেন। দিনমজুর স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না।

১ ছেলে ২ মেয়ের জননী আমিনা খাতুন। ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছে আগে। এখন বড় ছেলের সাথে থাকলেও নিজের আহারটুকু নিজেকে জোগাড় করতে হয়। জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন আমিনা খাতুন।

সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সারা দিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে বিকেলে খাবার নিয়ে ঘরে ফিরেন তিনি। অযত্নে একসময় ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় তিনি। স্বামীর শোক কাটতে না কাটতে তিনিও মৃত্যু পথের যাত্রী।

বয়সের ভারে আর তেমন কাজ করতে পারেন না। বৃদ্ধা আমিনা খাতুন বলেন, গায়ে শক্তি পাই না বলে মানুষ আর কাজে রাখে না। আমি অনেক মানুষের কাছে গেছি। কেউ আমার জন্য কিছু করে নাই। আমি খুবই অসহায়।
তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছে শুনছি, শেখের বেটি অসহায় মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন। যদি আমার জন্য একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন, তবে আমি শান্তি পাইতাম।