এম.এ আজিজ রাসেল


সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস। ‘সবার জন্য আবাসনঃ ভবিষ্যতের উন্নত নগর’ এ প্রতিপাদ্যে দিবসটিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কউক প্রাঙ্গণে গণশুনানী ও সেবা স্টলের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীদেরকে সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকাল তিনটায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সভাকক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে কাজ করছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। বিগত কয়েক বছরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সম্পাদিত প্রকল্পঃ
বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো হলো- কক্সবাজারের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য স্থাপন। সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প-১ ও সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প- বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং কউকের উন্নয়ন সম্বলিত টেরাকোটা স্থাপন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজারে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে ব্যাপক।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল বিশিষ্ট অফিস ভবন। কক্সবাজার শহরস্থ ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটা পুকুর সংস্কারসহ পুনর্বাসন প্রকল্প। এই প্রকল্প বর্তমানে প্রায় দৃশ্যমান। হলিডে মোড়- বাজারঘাটা- লারপাড়া (বাস স্ট্যান্ড) প্রধান সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ। শিগগিরই এই প্রকল্পো কাজ শুরু হবে। কক্সবাজার সদর উপজেলাধীন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ ও সবুজায়ন প্রকল্প।
প্রস্তাবিত প্রকল্পঃ
পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন। সুগন্ধা মোড়-সুগন্ধা পয়েন্ট-লাবনী পয়েন্ট সড়ক সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনকরণ। কলাতলীস্থ কউকের বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ। বাঁকখালী নদী সংলগ্ন ১৫০ ফুট প্রশস্ত সবুজ বেস্টনীসহ সড়ক উন্নয়ন। লাইট হাউজ- পাহাড়তলী- শহরের প্রধান সড়ক পর্যন্ত ২-৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণ।
কক্সবাজারকে নিয়ে পরিকল্পনাঃ
ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন। কক্সবাজার সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত শহর হিসেবে বড়ছড়া, হিমছড়ি এলাকায় বন বিভাগের জায়গায় রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল ইকো-ট্যুরিজম পার্কের আদলে কক্সবাজারে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার শহরে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা সম্বলিত শিশুপার্ক স্থাপন করা। কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর শাসন, দখল ও দূষণমুক্তকরণ এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি নদী তীরে পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বেস্টনী গড়ে তোলা। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার উন্নয়ন। সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আদলে আধুনিক প্রযুক্তিগত আন্তর্জাতিক মানের মেরিন বীচ ও সামুদ্রিক প্রাণী এ্যাকুরিয়াম স্থাপন এবং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে সুইমিং পুল স্থাপন করা। পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল রেস্তোরা, পিকনিক স্পট, রেন্ট-এ কার, অভিজ্ঞ পর্যটন গাইড ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করা। সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে খেলাধুলার উন্নয়নে কক্সবাজার কলাতলী, হিমছড়ি ও নিকটবর্তী পাহাড়ী এলাকায় গলফ মাঠ, টেনিস মাঠ নির্মাণ করা। কক্সবাজার হতে মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া ইত্যাদি এলাকায় ভ্রমণ ও যাতায়াতের সুবিধার্থে কস্তুরাঘাট, ৬নং ঘাট অথবা সুবিধাজনক স্থানে জেটিঘাট নির্মাণ করা। পর্যটন ও জনসাধারণের সময় সচেতনতার জন্য কক্সবাজার শহরে অপেক্ষাকৃত দৃশ্যমান স্থানে বিশাল আকৃতির ঘড়ি স্থাপন। পর্যটন খাতকে আরো গতিশীল করার জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক দর্শনীয় স্থান, পিকনিক স্পট, বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা, দূরত্ব সময় ইত্যাদি উল্লেখ পূর্বক বিভিন্ন হোটেলে ব্যানার, ফেস্টুন টাঙ্গানো বাধ্যতামুলক করা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে সমুদ্র সৈকতে (জোয়ার) এবং (জোয়ার-ভাটা) এ স্থায়ীভাবে সী-নেটিং ব্যবস্থা চালু করা। যার ফলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সমুদ্র বিনোদনের সময় যেকোন দুর্ঘটনায় চোরাবালিতে হারিয়ে যাওয়া রোধ করবে এবং দ্রুত উদ্ধারে সহজতর হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও রাস্তার উভয় পার্শে শোভাবর্ধনমূলক সবুজ বেস্টনি স্থাপন করা। যেহেতু কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত সেহেতু আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত লাইফ গার্ড ইউনিট গঠন করায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এর পর্যটন বান্ধব প্রচারণা। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে কক্সবাজারের উন্নয়নমূখী ও পর্যটন বান্ধব সুবিধা সম্বলিত তথ্যাবলী প্রচার করা। কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের যাত্রীসেবার মান বাড়ানো এবং ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। প্রয়োজনে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ পর্যটক গাইডের মাধ্যমে নিরাপদ যাতায়াত, ভ্রমণ ও বিনোদন নিশ্চিত করা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কক্সবাজার শহর থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাতায়াতের জন্য নৌ-যানের ব্যবস্থা করা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত চট্টগ্রাম-আনোয়ার-বাঁশখালী-টইটং-গোমাতলী-চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল হয়ে কক্সবাজার শহরের বদর মোকাম পর্যন্ত উপকুলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। পর্যটক ও নগরবাসীদের বিনোদনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রিক্রিয়েশন ক্লাব স্থাপন করা। সর্বোপরি মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আধুনিক নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ বলেন, এবারের বিশ্ব বসতির দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ ‘সবার জন্য আবাসনঃ ভবিষ্যতের উন্নত নগর’। কক্সবাজারের আবাসন সমস্যা লাঘবে ইতোমধ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষ ১৫ তলা বিশিষ্ট ৪টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গত ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের সূচনাতেই এর কাজ শুরু করা হয়। করোনাকালীন সেই পদক্ষেপ কিছুটা ব্যাহত হলেও এখন পুরোদমে কাজ হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের আবাসন সমস্যার বিষটি চিন্তা করেই ভবিষ্যতে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়তে কাজ করছে কউক।