এম.এ আজিজ রাসেল :
সরাসরি কৃষক থেকে ধান ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে জেলায় ৪২৬ জন কৃষক থেকে ১ হাজার ৬ মেট্টিক টন ধান কিনেছে সরকার। যার শতকার হার ১২.১৮। যা লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম। ফলে আলোরমুখ দেখেনি ধান সংগ্রহ অভিযান। সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহী না কৃষকেরা। কম দাম ও অধিক পরিবহন খরচের কারণেই কৃষকেরা সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে বিমূখ হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলে নানা হয়রানীর শিকার হতে হয় কৃষকদের। এখানকার কর্মচারিদের বকশিস না দিলে কেনা হয় না ধান। বকশিস দেয়ার পর ধান বিক্রি করে চেক নিয়েও টাকা পেতে ঘাম ঝরে কৃষকদের। সংশ্লিষ ব্যাংক কর্তাদেরও খুশি না করলে চেক নগদায়ন করতে গড়িমসি করে।
কৃষকের জানায়, সরকার কৃষকের কাছ থেকে কেজি প্রতি ২৬ টাকা করে ধান ক্রয় করেন। কিন্তু মিল মালিক ও পাইকারী ধান ব্যবসায়ীরা কৃষকের বাড়ি এসেই ২৪-২৫ টাকায় ধান কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু সরকারের কাছে ২৬ টাকায় ধান বিক্রি করেও অতিরিক্ত খরচসহ নানা কারণে লাভের মুখ দেখেন না কৃষকরা। যার কারণে খাদ্য গুদামের পরিবর্তে পাইকারী ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের কাছে ধান বিক্রি করা হচ্ছে। করোনা সংকটে কেজি প্রতি ৩০ টাকা ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হলে কৃষকরা লোকসানের পরিবর্তে লাভের আশা করতে পারবে।
সদর উপজেলার কৃষক আফজান হোসেন, মোতালেব উদ্দিন ও মো. শহিদ বলেন, বিআরডিসির বীজে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ অপুষ্ট ধান থাকে। অন্যান্য কোম্পানীর বীজেও একই পরিমাণ অপুষ্ট ধান হয়। ধান মাড়াইয়ের পরও ১৫০-২০০ অপুষ্ট ধান রয়ে যায়। অপুষ্ট ধানের অজুহাতে খাদ্য গুদামে ধান নেয়া হয় না। কিন্তু খাদ্য গুদামের কর্তা ব্যক্তিদের বকশিস দেয়া হলে পঁচা ধানও নিমিষেই কিনে নেয়া হয়।
তারা আরও বলেন, একজন কৃষক থেকে সর্বোচ্চ ২-৩ টন ধান কেনা হয়। ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী, মাছুয়াখালী থেকে ধান আনতে একজন কৃষকের পরিবহন খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। টন প্রতি পরিবহণ খরচসহ কষ্ট করে খাদ্য গুদামে ধান আনলে কর্মকর্তারা নিয়মের বেড়াজালে আটকে রাখে। খাদ্য গুদামের অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বকশিস দিতে হয়। টাকা না দিলে অপুষ্ট ধান বলে দেয়া হয় রিপোর্ট। আর টাকা পেলেই সব মাফ।
চকরিয়ার কৃষক জহিরুল আলম বলেন, খাদ্য গুদামে কোনমতে ধান বিক্রি করলেও চেক নগদায়ন করতে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। একজন কৃষককে চেক প্রতি ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয় সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে। সোনালী ব্যাংকে কৃষকের একাউন্ট না থাকলে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা পেতে কৃষকদের দৌড়ঝাপ দিতে হয় ২ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত। তাই এতো ঝামেলায় না গিয়েই কৃষকেরা বাড়িতেই পাইকারী ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের প্রতিনিধিদের কাছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা কেজি প্রতি ধান বিক্রি করে দেন। দুর্ভোগের জন্য কৃষকরা আর খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে যান না।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কক্সবাজারের ৮ উপজেলার ৬ হাজার ২৩২ জন কৃষক থেকে ৮ হাজার ২৬৭ মেট্টিক টন ধান ক্রয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু মৌসুম শেষে মাত্র ৪২৬ জন কৃষক সরকারের কাছে ১ হাজার ৬ মেট্টিক টন ধান বিক্রি করেছে। তার মধ্যে চকরিয়ার ৫৪ জন কৃষক থেকে ১৮৫ মে. টন, পেকুয়ার ৩ জন কৃষক থেকে ৮ মে.টন, রামুর ১৩৪ জন কৃষক থেকে ৩২২ মে.টন, সদরের ৪৭ জন কৃষক থেকে ১৪৭ মে.টন, উখিয়ার ১৭২ জন কৃষক থেকে ৩০৪ মে.টন, মহেশখালীর ৮ জন কৃষক থেকে ১৯ মে.টন ও কুতুবদিয়ার ৮ জন কৃষক থেকে ২০ মে.টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। টেকনাফের কোন কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেনি।
সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কৃষকের অনাগ্রহের কারণ নিয়ে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম বলেন, সরকারের নিকট ধান বিক্রি করলে তা স্ব স্ব উপজেলা অফিসে পৌঁছে দিতে হয়। এতে কষ্টের পাশাপাশি খরচ হয় অধিক। তাই কৃষকেরা দিন দিন সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।