মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে সমুদ্র সৈকতের ৫২ অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা নেই। রায় পর্যালোচনা করে এমন অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ৫২ ব্যক্তি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা শুরু করে। স্থাপনা তৈরির ২ মাস পর, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এসব স্থাপনা সরাতে তাদের নোটিশ দেয়। কউক এর দেওয়া ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্থাপনা নির্মানকারী ৫২ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। আদালত ১৬ এপ্রিল রুল জারীসহ কউক এর নোটিশের কার্যকারিতার উপর স্থগিতাদেশ দেয়।

এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের উক্ত স্থগিতাদেশের বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি করেই হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ ও রুল সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার ১ অক্টোবর বাতিল করে দেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষায় এ যুগান্তকারী আদেশ দেয়। হাইকোর্টে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন, আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর ৫২ ব্যক্তির রিটের পক্ষে শুনানি করেন-সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়োজিত আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন-কক্সবাজার পৌরসভার যিনি বা যারা ওই ৫২ ব্যক্তিকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হবে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, “সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অনেক আগেই আদালতের নির্দেশনা পেয়েছিলাম। ২০১১ সালে সমুদ্র সৈকত থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা বিবেচনায় আপিল বিভাগ কিন্তু আরও কঠিন রায় দিয়েছে। সে রায়ে বড় বড় অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভেঙে ফেলতে বলেছেন উচ্চ আদালত।

আপীল বিভাগের বৃহস্পতিবার প্রদত্ত এ রায় নিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও জায়গাটার মালিক জেলা প্রশাসন। এটা খাস জায়গা। খাস জায়গার দায়িত্ব কালেক্টরের। আর কালেক্টরেট হলেন ডিসি, ল্যান্ড মিনিস্ট্রি।
তাই এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পর প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ আরো বলেন, আমরা যদি যৌথভাবে এটা না করি, আমি সরাই দিলাম, অপসারণ করলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসন যদি এটা ধরে রাখতে না পারেন, অন্য একটা কিছু করার মতো ব্যবস্থা না করেন, তাহলে এ সমস্যাগুলো থেকেই যাবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সৈকতের ৫২টি স্থাপনা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রীটের রুল ও স্থগিতাদেশ খারিজ করার আদেশের খবর রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে জেনেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর তা কার্যকর করার জন্য দ্রুত উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।