ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন


স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ ( Hospital Acquired Infection সংক্ষেপে HAI বা এইচ এ আই )কে “নোসোকোমিয়াল” বা “হাসপাতাল” সংক্রমণ বলা হয়, এটি এমন একটি সংক্রমণ যা কোনও হাসপাতালে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে রোগীদের সেবার প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীর মধ্যে সংক্রমিত হয়। যা রোগীর ভর্তির বা incubation সময়ে ছিল না। এইচএআই যেকোনো জায়গায় হতে পারে যেসব সেবা কেন্দ্রে তারা সেবা গ্রহন করে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে এইচএআই দ্ধারা আক্রান্ত হতে পারে ।তাছাড়া এখন বলা হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পেশাগত সংক্রমণ ও এইচএ আইয়ের অন্তর্ভুক্ত। এইচএআই স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত করে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয় স্বাস্থ্যদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই। এটা সত্যি যে কোনও সংস্থা বা দেশ এখনও এ সমস্যার সমাধান করেছে বলে দাবি করতে পারে না। বেশ কয়েকটি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন রোগী এইচএআই দ্বারা আক্রান্ত হন। উচ্চ-আয়ের চেয়ে কম-মধ্যম আয়ের দেশে এইচএআইএর বোঝা কয়েকগুণ বেশি। এখন বিশ্বব্যাপী যে পরিসংখ্যান রয়েছে সে অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবের বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন। বলা হয়ে থাকে যে, কার্যকর সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) এর একমাত্র সমাধান।
বলে রাখা ভাল প্রতিদিন এইচএআইএর ফলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়
১. রোগীদের হাসপাতালে দীর্ঘদিন অবস্থান ২.দীর্ঘমেয়াদে অক্ষমতা,
৩.অনুজীবগুলোর ঔষধের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হওয়া ,
৪.স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অতিরিক্ত অতিরিক্ত ব্যয়, ৫.রোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য উচ্চ ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় মৃত্যুর ফলাফল হয়।
যদিও স্বাস্থ্যসেবা এইচএআই চরম ক্ষতি।নির্ভরযোগ্য তথ্য উপাত্তের কারণে এইচএ আইয়ের হারটা অজানা রয়ে গেছে। : বেশিরভাগ দেশে এইচআইএর জন্য নজরদারি সিস্টেমের অভাব রয়েছে একারণে তারা স্বাস্থ্যসেবা বিভিন্ন জটিলতায় ভোগে । WHO আইপিসি গ্লোবাল ইউনিট এইচএ আইয়ের উপর কাজ করে।তারা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশ থেকেই প্রকাশিত গবেষণাগুলি তুলনাকরে এবং এইচআইএর সমস্যার গভীরতা তুলে ধরতে সাহিত্যের পদ্ধতিগত পর্যালোচনা পরিচালিত হয়েছে।

* স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ (এইচএআই) সমস্যার সমাধান কী?
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক সহজ, স্বল্প ব্যয় এবং কার্যকর,হাতের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, তবে এজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জবাবদিহিতা এবং আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন।
HAI (এইচ এ আই) উন্নত সনাক্তকরণের মূল সমাধান এবং দৃষ্টিভঙ্গি হ’ল:
১.যেসব কারণে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমন বাড়ে তার কিছু নির্ণায়ক ঠিক করা।
২. জাতীয় পর্যায়ে HAI সম্পর্কিত রিপোর্টিং এবং নজরদারি ব্যবস্থা উন্নত করা।
৩.HAI কমানোর জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল গুলোতে মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষাগারগুলির ক্ষমতা সহ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এইচএআই নজরদারির জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সকল সুবিধা নিশ্চিত করা।
৪.জাতীয়ভাবে এবং স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল উপাদানগুলি যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৫. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট নিয়মগুলো( standard precaution technique) কার্যকর করা সাথে সাথে বিছানার পাশে হাতের সেরা স্বাস্থ্যবিধি (Hand Hygiene) অনুশীলন।
৬.কর্মীদের শিক্ষা এবং জবাবদিহিতা উন্নীতকরণ।
৭.উন্নয়নশীল দেশের বাস্তবতার ভিত্তিতে নজরদারি প্রোটোকলগুলি মানিয়ে নিতে এবং বৈধ করার জন্য গবেষণা পরিচালনা করা। ৮.এইচএআই রিপোর্টিং এবং নিয়ন্ত্রণে রোগীদের এবং তাদের পরিবারের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা। জাতীয় ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা স্তরে সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল উপাদানগুলির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬ সালে নিদের্শনা প্রকাশিত হয়েছিল। তারা আইপিসির আটটি ক্ষেত্রকে কভার করে এবং ১৪ টি সুপারিশ এবং সর্বোত্তম অনুশীলনের বিবরণী সমন্বিত করে।এবং সুপারিশ করে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে উচিত এটি অনুসরণ করা।


লেখক :নার্সিং কর্মকর্তা ও ডেপুটি ফোকাল পারসন
আইপিসি কমিটি, ২৫০শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার।