সিবিএন ডেস্ক:
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায়ও তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। একটি বড় রাজনৈতিক দলে দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকার ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলে তার মতো আর কোনও রাজনীতিক নেই।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী। ওই তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২৯তম অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ফোর্বসের ১৫তম বিশ্বের ক্ষমতাধর একশ’ নারীর তালিকাতেও প্রথম ৩০ জনের মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থান করে নিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রলীগের মনোনয়নে কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে বিদেশে থাকাকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা ৩৯ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। বর্তমান মেয়াদসহ তিন টার্মে টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্তও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বকাল ১৬ বছর। তিনি ১৯৮৬ সালে দুই বছর এবং ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ বছর এবং ২০০১ সাল থেকে পাঁচ বছর মোট ১২ বছর সংসদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশও আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বয়সে তিন বছরের ছোট। মোদির জন্ম ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতেও শেখ হাসিনার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোদি সেবক সংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) সরাসরি যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি পার্টির জাতীয় সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সালে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বয়সে বড় হলেও দেশটির নির্বাহী প্রধান রাষ্ট্রপতির বয়স তার চেয়ে কম। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও খুব একটা নেই। দেশটির রাষ্ট্রপতি নন্দসেনা গোতাবায়া রাজাপক্ষের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ জুন। রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও গোতাবায়ার ক্যারিয়ার সৈনিকের। সাবেক সেনা কর্মকর্তা লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম দলে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তার ভাই মাহেন্দ্র রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি থাকাকালে গোতাবায়া প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত বছর প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেই বাজিমাত করে ফেলেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের মতো বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার ও বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাজনীতি ও বয়স—উভয়দিক থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন। ৬৮ বছর বয়সী ইমরান খানের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার চার বছরের মাথায় রাজনীতি শুরু করেন। নিজেই তেহরিক-ই-ইনসাফ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রথমবার নির্বাচনে পরাজিত হলেও ২০১৩ সালে নিজের আসনে জয়ী হন। আর দল গঠনের ২২ বছরের মাথায় ২০১৮ সালে তার দল ক্ষমতায় যায়। তিনি নির্বাচিত হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী খড়্গ প্রসাদ শর্মা ওলী বয়সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে ছোট হলেও দু’জনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কাছাকাছি। ইমরান খানের সমবয়সী ওলী ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতিতে নাম লেখান। পরে অবশ্য কমিউনিস্ট ধারা থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এক বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় ছিলেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

ভুটানের সরকার প্রধান দেশটির রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াং চুক বয়সে খুবই নবীন। জিগমে সিংহে ওয়াং চুকের বড় সন্তান নামগিয়ালের জন্ম ১৯৮০-তে। তিনি ২০০৬ সালে রাজা নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তার অভিষেক হয়।

মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ রাজনীতি ও বয়স দু’দিক থেকেই শেখ হাসিনার পেছনে। ৫৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিক একসময় সাংবাদিক ছিলেন। তিনি মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) সহপ্রতিষ্ঠাতা। দেশটিতে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে রাজনৈতিক সংস্কার চালানো হয়েছিল, ইব্রাহিম ছিলেন তার অন্যতম পুরোধা। তিনি ২০১৮ সালে দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানির জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৯ মে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার খুব বেশিদিনের নয়। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। ২০০২ সালে তিনি বিশ্বব্যাংক থেকে চাকরি ছেড়ে আফগান সরকারের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০৯ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করলেও তাতে তিনি হেরে যান।