আতিকুর রহমান মানিক#
মহেশখালীর মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর চালু হচ্ছে চলতি বছরেই। কয়লাভিত্তিক ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটি ও চ্যানেল চলতি বছরের মধ্যেই চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে এই চ্যানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরেরও প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এই চ্যানেলে জাহাজ বার্থিং শুরু হবে। তবে শুরুতে চ্যানেলটিতে শুধুমাত্র প্রকল্পের কার্গোবাহী জাহাজ বার্থিং নেবে। আগামী এক বছরের মধ্যেই মাতারবাড়িতে কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়ানো শুরু হবে। আড়াইশ’ মিটার প্রস্থের এই চ্যানেলে শুরুতে ৮/৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানিয়েছে, মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম এটি। জাইকার অর্থায়নে এটি নির্মিত হচ্ছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাপানের তোশিবা কর্পোরেশনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিপিজিসিবিএল-এর সাথে চুক্তি করেছে। ওই চুক্তির আওতায় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের কয়লা আমদানির জন্য মাতারবাড়িতে ৭ কিলোমিটারের একটি নৌ চ্যানেলও গড়ে তোলা হয়েছে। আড়াইশ’ মিটার প্রস্থের এই চ্যানেল ব্যবহার করে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা পরিবহন করা হবে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কয়লা আনা হবে বলেও প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চারটি জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। আড়াইশ’ মিটারের এই চ্যানেলটির পাশে আরো একশ’ মিটার বাড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে।
উক্ত চ্যানেল আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। একটি এমওইউ’র আওতায় চ্যানেলটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে মাতারবাড়িতে ভিটিএমএস স্থাপন, বয়া স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের এলাকাও মাতারবাড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে ইতোমধ্যে সার্কুলার জারি করেছে।
চলতি বছরেই বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ি বন্দর চালু করার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবেই মাতারবাড়িতে কার্যক্রম চলবে। শুরুতে এই বন্দরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও ইক্যুপমেন্ট খালাস করা হবে। তবে আগামী বছর থেকে মাতারবাড়ি চ্যানেলে কয়লাবাহী জাহাজ নোঙর করবে।
সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে শুরুতেই বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুদ গড়ে তুলতে হবে। পরবর্তীতে যা পুড়ানো হবে সেই পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে। তবে আপদকালীন মজুদ সবসময় রাখা হবে।উক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০২৩ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও আগামী বছর থেকেই কয়লা আনা শুরু হবে বলে সূত্র জানায়।
এব্যাপারে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বছরই মাতারবাড়ি চ্যানেল চালু হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আগামী মাস কয়েকের মধ্যেই এই চ্যানেলে জাহাজ ভিড়বে। চ্যানেলটি আমাদের কাছে হস্তান্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিনি আগামী বছর থেকে কয়লাবাহী জাহাজ আসার কথাও স্বীকার করেন। মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।