এম.আর মাহমুদ:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান টেকনাফের বাহার ছড়ায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নিহত হওয়ার পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এ ঘটনার পর টেকনাফ থানার বহু বিতর্কিত সাবেক অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশসহ বেশ ক’জন পুলিশ ও পুলিশের দায়ের করা মামলার ৩ জন সাক্ষীসহ ১৪ জন এখন আইনের জালে আটকা পড়ে কারাগারে রয়েছে। নরহত্যা অভিযোগে তাদের বিচার হবে প্রকাশ্য আদালতে।

মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর পুরো জেলার পুলিশ বাহিনীর উপর বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। এ ঝড়ের তান্ডবে ইতিমধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, ৮ থানার অফিসার ইনচার্জসহ প্রায় ১৫‘শ পুলিশ এক যোগে দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে বদলী করেছেন পুলিশের সদর দপ্তর। স্বল্প সময়ের মধ্যে বদলীকৃত পুলিশের কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকলকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের ৮ থানায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বদলীকৃত পুলিশ কর্মকর্তারা যোগদান করতে শুরু করেছে। তৎমধ্যে ৮ থানায় অফিসার ইনচার্জ (প্রশাসন) ও অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) যোগদান করেছে। বদলীকৃত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে জনস্বার্থে বদলী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তর। টেকনাফের বহু বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলীর ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে জেলার সব পুলিশকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অকপটে স্বীকার করেছেন, প্রদীপ ঝড়ের শিকার হয়ে কক্সবাজার জেলার সব পুলিশকে “বলির পাঠা” হতে হয়েছে। তাদের মতে যেহেতু চাকুরীজীবি সেহেতু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করার কোন সুযোগ নেই। তবে একসাথে এক জেলার সমস্ত পুলিশকে বদলী করার দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম। হয়তো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলার টেকনাফের আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের হারানো ভাবমূর্তি পুনঃ উদ্ধারের জন্য এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।

আগামীকাল থেকে জেলায় পুরনো কোন পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড আর দৃশ্যমান হবে না। এখন থেকে দৃশ্যমান হবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যোগদান করা নবাগত কর্মকর্তাদের। বিজ্ঞজনদের অভিমত, থানায় সব কর্মকর্তা নবাগত হলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তারা অপরাধীসহ (হোয়াইট কালার ক্রিমিনালদের) চি‎িহ্নত করতে একটু সময় লাগে। এ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে অনেক অপরাধী। তারা আড়ালে আবদানে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত। থানায় নতুন কর্মকর্তাদের আগমনে অতীতে বিতাড়িত দালাল চক্র পুনরায় তাদের কুকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘তীর্থের কাকের মত’ বসে আছে। তবে যেখানে মাজার আছে, সেখানে ফকির, দরবেশ, পুন্যার্থী যেমন থাকে, তেমন গাজার নেশায় আসক্ত কিছু ব্যক্তিও ভিড় জমায়; তা নিয়ে মাথা ব্যথা করবে পুলিশের নবাগত কর্মকর্তারা। তবে নবাগত কর্মকর্তাদের প্রতি একটি অনুরোধ, অপরাধীরা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়। এক্ষেত্রে কঠোরতা দেখাতে যেন কৃপণতা না করে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশকে কঠোরভাবে অপরাধীদের দমন করতে হয়। এক্ষেত্রে আবেগকে প্রাধান্য না দিয়ে বিবেককে প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে লেখাটির ইতি টানছি। তবে একটি প্রিয় গানের দু’টি কলি বার বার মনে পড়ে ‘হঠাৎ আসে যদি বৈশাখী ঝড়, ভেঙ্গে যায় গানের আসর।’ শুধুমাত্র প্রদীপ ও লিয়াকত কান্ডের শিকার হয়ে মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান নির্মমভাবে প্রাণ হারানোর কারণে আজ কক্সবাজার জেলায় পুলিশের উপর কালবৈশাখীর ঝড়টি বয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের ঘটনা আর না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলকে। কক্সবাজার জেলায় কর্মরত যেসব কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন রেঞ্জে বদলী হয়েছে তাদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা যেমনি করছি, তেমনি নবাগতদের প্রতিও সাধুবাদ জানাচ্ছি তারা যেন জেলাবাসীকে ইয়াবার অপবাদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

এম.আর মাহমুদ
সংবাকর্মী, চকরিয়া
২৬/০৯/২০২০ইং।