আবদুল করিম বিটু, চকরিয়া:
অপরুপ চিত্র নেমে এসেছে পুরো শাপলারবিল জুড়ে। প্রায় তিনশ একরের এই শাপলার বিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে শুধুই সাদা আর গোলাপী পাপড়ীর মিশেলে থাকা শাপলাফুলের সমাহার। পড়ন্ত বিকেলের মৃদমন্দ আবহাওয়ায় বিলের পানির ঢেউয়ের তালে মাথা উচু করে থাকা একেকটা শাপলা যেন প্রকৃতির সাথে মিতালীতে মেতেছে।

বিলজুড়ে থাকা অসংখ্য শাপলা নজড় কাড়ছে দুরদুরান্ত থেকে আসা প্রকৃতি প্রেমিদের। অনেকেই নৌকায় চড়ে পুরো বিল ঘুরে দেখছেন। আবার কেউ বিলের পাড়ের পাহাড়ের গাছ তলায় চুপটি করে বসে উপভোগ করছেন এই সৌন্দর্য। যতটুকু দু চোখের দৃষ্টি যায় শাপলার সমারোহ মনকে প্রফুল্ল করে তুলে। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাষু ও প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে এখন নতুন ঠিকানা চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের নলবিলা শাপলারবিল।

সূর্য উকি দেয়ার সাথে সাথে একেকটা শাপলা কলি ভেদ করে পাপড়ি মেলে নিজের সৌন্দর্যের জানান দেয় প্রকৃতির মাঝে। সেই সৌন্দর্যকে যেন আরো নৈসর্গিক করে তুলে খাবার সংগ্রহের জন্য দল বেঁধে ছুটে আসা শালিক পাখির দল। তাদের কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিল। প্রতিটি শাপলাপাতার উপরে মুক্তার মত টল মল করতে থাকা পানি যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের অলংকার।

শাপলা বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যাক দর্শনার্থীরা ভিড় করে। তাদের কেউ কেউ ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ান বিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।

বিলে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র জনি ও মোঃ নোমান বলেন, কাকারার শাপলার বিলের নাম শুনেছি। সরেজমিনে এসে দেখি খুবই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আমরা তিন বন্ধু মিলে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে পুরো বিল ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত উচমান বলেন, এই বিলের চারপাশে গাছপালা ও পাহাড় রয়েছে, এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সবাই আসতে পারেন নির্দ্বিধায় । নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই বলেই চলে।

চট্টগ্রাম থেকে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা এম. জুনাইদ উদ্দিন বলেন, অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি চকরিয়ার এই পদ্মবিলে না আসলে বুঝতে পারতাম না কক্সবাজারের আরেকটি রূপের বিষয়,এখানকার মানুষের প্রকৃতি সংরক্ষণের যে তাগিদ তা সত্যিই আকৃষ্ট করে সবাইকে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে শাপলাবিল বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। যারা প্রকৃতি প্রেমিক তারা এখানে এলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিমিষেই বুঝতে পারবেন।

স্থানীয়রা বলেন, কয়েক যুগ ধরে এই বিলে শাপলা ফুঁটছে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দুর দুরান্ত থেকে লোকজন প্রতিনিয়ত আসছে। বিল সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক দর্শনার্থীরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে আন্দদের ছলে ফুলগুলো ছিড়ে ফেলে। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা তাদের প্রতি আহবান জানাই তারা যেন এই বিলের ফুলগুলো না ছিড়ে।

ভ্রমন মৌসুমে সুদিন ফিরে পাওয়া ডিঙ্গি নৌকার মাঝি জিয়াবুল বলেন, বর্ষা মৌসুমে তেমন কোন কাজকর্ম থাকে না। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল। তবে ভ্রমন মৌসুম হওয়ায় নৌকা নিয়ে বিলের পাড়ে বসে থাকি। বিভিন্ন লোকজন নৌকায় করে বিল উপভোগ করে। এতে আমাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকার রোজগার হয়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই চলতে পারি।

চকরিয়া থাানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, দর্শনার্থীরা যাতে শাপলার বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিরিবিলি এবং নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, এ বিলকে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে।