আমিনুল ইসলামঃ
সকাল ১০ টার মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। তাই মহেশখালী জেটিতে রহিম উল্লাহকে (ছদ্মনাম) আসতে হল ৯ টার ৩০ মিনিট আগে। কয়েকশো মানুষের অবস্থান জেটিতে। সকলের তাড়া আছে। সবার কাজের মূল্য আছে। কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার নয়। এমন সময় মহিলার আওয়াজ- আল্লাহ গো বাঁচাও বাঁচাও। কি হল দেখতে সকলের দৃষ্টি পানিতে। কেউ হাসছে কেউ বা সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে। মিনিট কয়েকপর পানি থেকে ওঠানো হল মহিলাকে।

রহিম উল্লাহ এখনো দাঁড়িয়ে আছেন স্পিডবোটের আশায়, কবে একটু জায়গা পাবেন এবং সুযোগ মত ওঠে পড়বেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মহিলার পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় আর সাহস পাচ্ছেন না ঠেলাঠেলি করে জায়গা দখল করতে। দাঁড়িয়ে আছেন এখনো। সময় তখন ৯ টা বেজে ১০ মিনিট। প্রায় ৩০ মিনিট পর কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। মানুষের চেয়ে স্পিডবোট কম রাখেন চালকরা। যাতে করে তারা ভাড়া বাড়াতে পারেন, মানুষের প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়ে। অভিযোগ করলেন রহিম উল্লাহর মত অনেকে।

মাঝপথে যেতে না যেতে হল বিপত্তি। স্পিডবোটের ইঞ্জিন কাজ করছে না। চালক অনেক্ষণ গুতাগুতি করার পর আবারও যাত্রা শুরু। কক্সবাজার প্রবেশের সময় নদীতে ভাটা চলমান। তাই নির্ধারিত স্থান থেকে অনেকটা দূরে স্পিডবোটের অবস্থান। ভাড়া দিয়ে নামার আগেই মানুষের লাফালাফি কে উঠবেন কার আগে! অনেকটা মৃত্যুকে জয় করে অনেক গুলো বোটের গা বেয়ে কোন মতে ঘাটে ওঠলেন। কিছুদূর হাটার পর ঘাট থেকে বের হতে দিতে হবে ৫ টাকা। পকেটে হাত দিয়ে দেখা যায়, মানিব্যাগটাও সরিয়ে ফেলেছে যাত্রী সেজে বসে থাকা কেউ একজন।

এদিকে ৫ টাকার জন্যে বেশ কিছু গালিগালাজ শুনে কোন মতে মাফ চেয়ে বের হলেন কক্সবাজার ৬ নাম্বার ঘাট থেকে। ঘড়িতে তখন ১১ টার কাছাকাছি। প্র‍য়োজন অনুযায়ী বিকাশ থেকে টাকা নিয়ে সারাদিন আদালত প্রাঙ্গনের কাজ শেষে বিকাল ৫ টায় আবারও ৬ নাম্বার জেটি ঘাটে। আগের ৫ টাকা এবং আবারও ঘাট ব্যবহারের ৫ টাকা সহ মোট ১০ টাকা দিয়ে স্পিডবোটের দিকে গিয়ে দেখা গেল মহেশখালী ফেরা মানুষের ভীড়। আবারও সকালের ঘটনার উৎপত্তি। স্পিডবোটে উঠার সময় মানুষের ধাক্কায় পানিতে সাতার কাটছেন দুজন ৫০ উর্ধ মানুষ। অনেকে হাসছেন, অনেকে ঘাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে গালিগালাজ করছেন। পানিতে থাকা মানুষগুলোর দিকে নজর দেওয়ার সময় কারো নেই, যেহেতু ফিরতে হবে গন্তব্যে।

রহিম উল্লাহ এইবার সাহস করে লাফিয়ে উঠলেন স্পিডবোটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় একজন যাত্রী (মহিলা) বেশি হওয়ার কারণে স্পিডবোট ছাড়ছে না। এদিকে কেউ জায়গা ছেড়ে উঠার লোক নই। তাই বসে আছেন দীর্ঘ ১০ মিনিট। অনেক্ষণ পর রহিম উল্লাহ তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এবং দাড়িয়ে আছেন অন্য কোন সুযোগের অপেক্ষায়।

হঠাৎ রহিম.. ও রহিম.. বলে ডাক দিলেন স্থানীয় এক নেতা। রিজার্ভ করা স্পিডবোটে তুলে নিলেন তাকে। মনে মনে সৃষ্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাত্রা শুরু করলেন মহেশখালীর দিকে।

রাত ১০ টা পর্যন্ত মোবাইল বন্ধ পেয়ে দিকবেদিক ছুটতে লগলো রহিমের স্ত্রী, মা ও দুই ছেলে। ফেইসবুকের সূত্রে খবর পেলেন, দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে দুইজন নিহত, তিনজন নিখোঁজ এবং অনেকে আহত।

মাসখানেক হাসপাতালে থাকার পর হুইলচেয়ারে করে আবারও কক্সবাজার ৬ নাম্বার জেটিতে অপেক্ষা মহেশখালী ফেরার।